প্রযুক্তিগত গোলযোগের জেরে মঙ্গলবার প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে বন্ধ ছিল হোয়াটসঅ্যাপ পরিষেবা। এবার এ নিয়ে আশঙ্কার কথা প্রকাশন করলেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সংস্থায় এত বড় সমস্যা আসলে কোনও সাইবার হানা হতে পারে। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের তথ্যও হাতিয়ে নেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কিত তাঁরা। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আচমকা গোলমাল শুরু হয় হোয়াটসঅ্যাপ পরিষেবায়। যার জেরে সমস্যায় পড়ে গোটা বিশ্বের উপভোক্তারা। এ দেশে হোয়াটসঅ্যাপের কোটি কোটি গ্রাহক। আচমকাই থমকে যায় ভার্চুয়াল জগতে গ্রাহকদের সক্রিয়তা। এ নিয়ে সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, “বড় সংস্থাগুলিতে যদি নিজস্ব কোনও পরিবর্তন হয় তা হলে একসঙ্গে সব সার্ভার ডাউন করা হয় না। একটি সার্ভার সচল রেখে দেওয়া হয়। যাতে পরিষেবা সচল থাকে। কিন্তু এখন পরিষেবাই চালু নেই। তাই মনে হচ্ছে, কোনও সাইবার হামলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং এটা কী ধরনের হামলা তা আমরা বাইরে থেকে বুঝতে পারব না। ওরা মূল সমস্যা বার করার চেষ্টা করছে।”
পাশাপাশি সন্দীপবাবুর বক্তব্য, “হয়তো হামলার জেরে শুধু মাত্র সার্ভারটাই ডাউন হয়েছে। কিন্তু যদি কোনও কারণে হামলাকারীরা সার্ভারে ঢুকে পড়ে তা হলে তথ্য চুরির আশঙ্কা আছে। ডেটাবেসে ঢুকলে আমাদের তথ্যও হয়তো সুরক্ষিত থাকবে না। এটা বিশ্ব জুড়ে হয়ে থাকলে ইউরোপিয়ন কমিশন এর কারণ জানতে চাইবে। কতটা তথ্য চুরি গিয়েছে বা কী ধরনের অ্যাটাক হয়েছে তা নিয়ে তদন্ত হবে। তখন প্রকৃত বিষয়টি জানা যাবে। তার আগে অবধি, এই ধরনের বেসরকারি সংস্থা কখনও স্বীকার করে না সাইবার হামলা হয়েছে কি না। যদি তাড়াতাড়ি পরিষেবা সচল হয়ে যায় তা হলে, ওরা হয়তো আগামিকাল বিবৃতি দেবে সার্ভারের সমস্যা ছিল। কিন্তু ভিতরে ভিতরে এই সব সংস্থায় সবসময় হামলার আশঙ্কা থাকে। সে জন্য বড়সড় হামলা হলেই এদের পরিবেষা ব্যবহত হয়। না হলে এরা সামলে নেওয়ার ক্ষমতা থাকে।” সাইবার হামলা হলে গ্রাহকদের তথ্য বিক্রি হয়ে যেতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, “সাইবার অপরাধীরা অনেক কিছু করতে পারে এই তথ্য নিয়ে। সাধারণ মানুষের কিছু করার নেই। আমাদের দেশের সরকারের উচিত তথ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য নির্দিষ্ট আইন আনা”, আশঙ্কা সন্দীপ সেপগুপ্তের।
পাশাপাশি, আরেক বিশিষ্ট সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ইউরোপে এই সংক্রান্ত আইনে বলা হয়েছে, যদি কোনও সংস্থার তথ্য হাতানো হয় তা হলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওই সংস্থাকে সর্বসমক্ষে জানাতে হবে তার সিস্টেমে সাইবার হানা হয়েছে এবং মানুষকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ভারতে ৭০-৭৫ কোটি মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন। পৃথিবীতেও সবচেয়ে বেশি গ্রাহক ভারতে। এই ঘটনা নতুন নয়। আমরা এখন তথ্যের যুগে বসবাস করি। এই পরিস্থিতিতে আমার অবাক লাগছে। আমার দুঃখও হচ্ছে। এখানে এনক্রিপশন খুব উচ্চ মানের। কিন্তু সার্ভারে হামলা হলে বিপুল তথ্য অন্যের হাতে চলে যেতে পারে। যদি তাই হয় তা হলে এটা বৃহত্তম তথ্য চুরি হবে। আমাদের দেশে তথ্য সুরক্ষিত রাখার আইন প্রয়োজন। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে এই ধরনের আইন আছে। দেশের কোটি কোটি মানুষের তথ্যের গোপনীয়তার দায় কে নেবে?এত ক্ষণ ধরে হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ থাকার পিছনে গোপন খেলা কী?”, প্রশ্ন বিভাসবাবুর। স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন দেশের সাধারণ মানুষ। তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে সংশয়ে ভুগছেন তাঁরা।