২০১৯-এ বউবাজার মেট্রো বিপর্যয়ে রাতারাতি ঘরছাড়া হতে হয়েছিল বেশ কয়েকটি পরিবারকে। সকলেই ভেবেছিলেন এবার দীপাবলিতে নিজেদের ভিটে মাটিতে ফিরতে পারবেন তারা। কিন্তু ফের নতুন করে বিপর্যয় সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের বিপর্যয়ের পর প্রাথমিকভাবে শহরের বেশ কিছু হোটেলে ঠাঁই হয়েছিল ওই ঘরছাড়াদের। প্রথম বিপর্যয়ের পর ক্ষতিপূরণ এবং ঘরছাড়াদের চুক্তি মোতাবেক হোটেলের ঠিকানা বদলে ঘরছাড়া পরিবারদের আপাতত অস্থায়ী ঠিকানা হিসেবে কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষ ঘরছাড়া পরিবারদের রাখার জন্য বিভিন্ন ফ্ল্যাট-বাড়ির ব্যবস্থা করে। কিছু ক্ষেত্রে মেট্রো কর্তৃপক্ষ নিজেই সেই সমস্ত বাড়ির বা ফ্ল্যাট মালিকদের সঙ্গে বাড়ি ভাড়ার চুক্তি করে। কিছু ঘরছাড়াদের নির্দিষ্ট চুক্তিপত্র বানিয়ে ভাড়া বাড়ির মালিকদের সঙ্গে ঘরছাড়াদের চুক্তিপত্র মোতাবেক বাড়ি ভাড়ার টাকা মেটানোর আশ্বাস দেয় মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ।
আশ্বাস মতো ২০১৯ থেকে ঘরছাড়া এমন সমস্ত পরিবারদের বাড়ি ভাড়া আজও মিটিয়ে আসছে তারা। কিন্তু সেই চুক্তিপত্রে স্পষ্ট লেখা আছে, ১১ মাসের যে এগ্রিমেন্ট সেই এগ্রিমেন্ট পুনর্নবীকরণ-এর সময় যা বাড়ি ভাড়া তার ১০ শতাংশ করে প্রতি ১১ মাস অন্তর বাড়ি ভাড়া বাড়াতে হবে। আর এরপর থেকেই শুরু সমস্যা। ঘোর বিপদে পড়েছেন ঘরছাড়াদের অনেকেই। চুক্তিপত্র মেনে কোন পরিবারকে ১৮ হাজার বা কোন পরিবারকে তারও বেশি বাড়িভাড়া কেএমআরসিএল মেটালেও এগ্রিমেন্ট পুনর্নবীকরণের পর যে বর্ধিত বাড়িভাড়া তা মেটাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মাসের পর মাস সেই বর্ধিত বাড়ি ভাড়া নিজেদের পকেট থেকে দিতে হচ্ছে ঘরছাড়াদের।
যেমন দুর্গা পিটুরি লেনে যে ঠাকুরদালান ছিল সেখানকার দেবদেবীদেরও আজ ঠাঁই হয়েছে অন্যত্র। বিপর্যয়ের সময় মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ বলেছিল, ঠাকুরদালানেরও অস্থায়ী পুনর্বাসন দেওয়া হবে। কিন্তু কথা রাখেনি তারা। ঠাকুরদালানের দেখভাল করা ঘরছাড়া আবাসিকদের অস্থায়ী ফ্লাট বাড়ির টাকা চুক্তি অনুযায়ী মেটালেও একদিকে যেমন বর্ধিত বাড়ি ভাড়া মিলছে না অন্যদিকে, এই সমস্ত বিভিন্ন ঠাকুর দেবতার জন্য দুটি ফ্ল্যাটের ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ৪১ হাজার ৫০০ টাকা নিজেদের পকেট থেকে বাড়ির মালিককে মেটাতে হচ্ছে। তাঁরা কবে নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন? বাড়িতে থাকা জিনিসপত্রের কী হবে? আদৌ নিজেদের ভিটেমাটিতে ফিরতে পারবেন কিনা? ভবিষ্যৎ কী? প্রতি মুহূর্তে এই সমস্ত প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ঘরছাড়াদের মনে।