আলো-উৎসবের মরসুমে হঠাৎই যেন নিষ্প্রভ হয়ে গিয়েছিল দেশবাসীর মুখ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই হেরে যাবে ভারত? এই প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছিল মনে। ৬.১ ওভারে ৩১ রানে চার উইকেট। পাক পেসারদের দাপটে প্যাভিলিয়নে ফিরে গিয়েছেন কেএল রাহুল, রোহিত শর্মা, সূর্যকুমার যাদব এবং অক্ষর প্যাটেল। জয়ের লক্ষ্য ১৬০। অথচ ধুঁকছে ভারতের টপ অর্ডার। এহেন পরিস্থিতিতে যে মাথা ঠান্ডা রেখে খেলা সহজ নয়। কিন্তু পাহাড়প্রমাণ চাপ দমাতে পারেনি তাঁকে। দাঁতে দাঁত চেপে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে গেলেন বিরাট কোহলি। যোগ্য সঙ্গত দিলেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। মেলবোর্নে ঝলমল করে উঠল তেরঙা।
ঠিক এক বছর আগের কথা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তৈরি হয়েছিল লজ্জার ইতিহাস। অধিনায়ক বিরাটের জমানাতেই প্রথমবার বিশ্বকাপের ইতিহাসে পাকিস্তানের কাছে হারতে হয় টিম ইন্ডিয়াকে। প্রবল সমালোচনা ধেয়ে এসেছিল তাঁর দিকে। আজ, ২৩শে অক্টোবর, ২০২২। অধিনায়কের দায়িত্বে না থাকলেও ব্যাট হাতে দলকে অবিশ্বাস্য জয় উপহার দিলেন কোহলি। ৫৩ বলে ৮২ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলে বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপে পাকিস্তানের কাছে হারের মধুর প্রতিশোধ নিলেন। ৬টি চার ও চারটি ছক্কা দিয়ে সাজানো ছিল তাঁর ইনিংস।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মেলবোর্নের মেঘলা আকাশে সুবিধা পাবেন পেসাররা – এ কথা মাথায় রেখেই টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। প্রথম থেকেই দারুণভাবে সুইং করছিল ভুবনেশ্বর, অর্শদীপদের বল। মুখ থুবড়ে পড়ে পাক টপ অর্ডার। টি-২০ ক্রিকেটে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটার তথা পাক অধিনায়ক বাবর আজম কোনো রান না করেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন। তাঁকে এলবিডব্লিউ করে প্যাভিলিয়নে ফেরান অর্শদীপ। শুধু তাই নয়, তুলে নেন আরেক ভয়ংকর ব্যাটার রিজওয়ানের উইকেটটিও। আসিফ আলিকেও আউট করেন তিনি। বল হাতে উজ্জ্বল হার্দিক পাণ্ডিয়া। ভারতীয় অলরাউন্ডার তুলে নেন তিনটি মূল্যবান উইকেট। শামি ও ভুবির ঝুলিতে যায় একটি করে উইকেট।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ভারত। নাসিমের বলে আউট হলেন সহ-অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। তাঁর পরেই সাজঘরে ফিরলেন অধিনায়ক রোহিতও। আগ্রাসী মেজাজে শুরু করেও বড় ইনিংস খেলতে পারলেন না সূর্যকুমার যাদবও। ১০ বলে ১৫ রান করে আউট হলেন সূর্যকুমার। দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং অর্ডারে বদল করে ভারতীয় দল। পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হয় অক্ষর প্যাটেলকে। বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে নামিয়ে দ্রুত কিছু রান তুলে নিতে চেয়েছিলেন রোহিতরা। সেই পরিকল্পনাও কাজে এল না। বিরাট কোহলির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির ফেরে রানআউট হয়ে যান অক্ষর। এরপর ঠান্ডা মাথায় উইকেটে টিকে থাকেন বিরাট ও হার্দিক। ধীরে ধীরে রানের গতি বাড়ান। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৬ রান। প্রথম বলেই হার্দিক আউট হন। যথারীতি চাপ বাড়ে টিম ইন্ডিয়ার উপর। তবে শেষ ওভারে ফ্রি হিট, ওয়াইড, আউট, ওভার বাউন্ডারির মতো নানান উত্তেজক ও রুদ্ধশ্বাস মুহূর্ত পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় ভারত। ম্যাচের সেরা হিসেবে বিরাট কোহলিকে বেছে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।