আর মাত্র কয়েকদিন। তারপরই শ্যামার আরাধনা ও আলোর উৎসবে মেতে উঠবে বাঙালি। আজ জেনে নেওয়া যাক বাংলার এক সাবেকি ও ঐতিহ্যবাহী কালীবাড়ির কথা। ব্রহ্মযামল গ্রন্থ অনুযায়ী, কালীই হলেন বঙ্গের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এছাড়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এখানেই দেবীর জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। আবার বাঙালীর কাছেও জনপ্রিয়তম দেবী ইনিই। ফলত এই বাংলার কোণায় কোণায় গজিয়ে উঠছে একেকটি কালীপীঠ। পশ্চিম মেদিনীপুরের হবিবপুরে রয়েছে এমনই এক কালীবাড়ি। যার ইতিবৃত্ত শুনলে রোমাঞ্চিত হতে হয়। হবিবপুরের এই কালীবাড়ি লছি পোদ্দার কালীবাড়ি নামে খ্যাত। এর বয়স প্রায় ৪০০ বছর। শোনা যায়, লক্ষ্মীনারায়ণ দে নামক জনৈক ব্যক্তির হাত ধরে এই পুজো শুরু হয়। আর লক্ষ্মীনারায়ণের নাম থেকেই এই কালীবাড়ির নাম হয়েছে লছি পোদ্দার কালীবাড়ি। লক্ষ্মী থেকে লছমি, আর তা থেকে লছি। এছাড়া জানা যায়, তাঁর পেশা ছিল পোদ্দারি। সব মিলিয়েই কালীবাড়িটির নাম হয় লছি পোদ্দার কালীবাড়ি।
উল্লেখ্য, এই কালীবাড়ির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে এক রহস্যে মোড়া ইতিহাস। কথিত আছে, লক্ষ্মীনারায়ণ দে একবার মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। এর দিনকয়েক পরই এক রাতে তিনি টের পান, এক অদৃশ্য মহিলা নূপুর পায়ে বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নূপুরের ছন্দে মুখরিত গোটা বাড়ি। স্বাভাবিকভাবেই তখন ভয় পেয়েছিলেন লক্ষ্মীনারায়ণ। এরপর তিনি আবার স্বপ্নাদেশ পান, যেখানে গিয়ে এই নূপুরের শব্দ থেমে যাবে, সেখানেই যেন দেবী কালীকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই কথামতোই দেবীর মন্দির স্থাপন করেন লক্ষ্মীনারায়ণ। আর আজও সেই মন্দির একইভাবে জাগ্রত। যদিও পুজো কিন্তু সারাবছর হয় না। মূর্তিও প্রতিষ্ঠিত নয়। শুধুমাত্র কার্তিক মাসের অমাবস্যায় বার্ষিক পুজো হয়ে থাকে। যদিও পুজোর উপাচার শুরু হয়ে যায় দুর্গাপুজোর দশমীর দিন থেকেই। বলিদান প্রথা এখানে রয়েছে। তবে পশুবলি নয়। বিভিন্ন প্রকার সবজি বলি দেওয়া হয়। তবে এই পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, একটি অবিবাহিত মেয়ের সারা বছরের খোরাকস্বরূপ ১০৮ কেজি চাল উৎসর্গ করা হয় দেবীকে। লক্ষ্মীনারায়ণের অধঃস্তন পুরুষেরাই বংশ পরম্পরায় এই কালীবাড়ির সেবায়েত। যেহেতু প্রতিষ্ঠিত প্রতিমা নয়, তাই এ কালীকে নিরঞ্জনের ব্যবস্থা-ও রয়েছে। আর পুরনো প্রথা মেনে গরুর গাড়িতে করে নিরঞ্জনে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিমাকে। যা নিয়ে বেশ উন্মাদনা দেখা যায় এলাকাবাসীর মধ্যে।