বাংলায় দেবী দুর্গার উপাসনার সঙ্গেই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত কুমারী পুজো। এর মাধ্যমে দেবীকে মৃন্ময়ীরূপে আরাধনার পাশাপাশি কুমারীর মধ্যে মাতৃরূপ দর্শন করা হয়। বেলুড় মঠের কুমারী পুজো
ঐতিহ্যপূর্ণ। প্রতিবারের মতো এবারও তার আয়োজন করা হয়েছে। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ভাবনা থেকেই বেলুড়ে কুমারী পুজো শুরু হয়েছিল। বিগত ১৯০১ সালে বেলুড় মঠে কুমারী পুজোর সূচনা করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। মা সারদার উপস্থিতিতে শঙ্খ, বাদ্য, অর্ঘ, বলয় ও বস্ত্রাদি সহযোগে নয় জন কুমারীকে পুজো করেছিলেন তিনি। আর সেই রীতি মেনে আজও সেখানে প্রতি বছর অষ্টমীতে কুমারী পুজোর আয়োজন করা হয়। কথিত রয়েছে, কোলাসুরকে বধ করার মধ্যে দিয়ে কুমারী পুজোর প্রচলন হয়েছিল। কোলাসুর একসময় স্বর্গ ও মর্ত্য অধিকার করে নিয়েছিল। দেবকুল মহাকালীর শরণাপন্ন হয়েছিলেন। এরপর দেবতাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী পুনর্জন্মে কুমারীরূপে কোলাসুরকে বধ করেন। তারপর থেকেই কুমারী পুজোর প্রচলন শুরু হয়। দেবীজ্ঞানে যে কোনও কুমারীকেই পুজো করা যায়। তবে আগে কুমারীপুজোর মাধ্যমে পুজো করা হত প্রকৃতিকে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মহাষ্টমীর সকাল থেকেই বেলুড় মঠে শুরু হয় কুমারী পুজোর প্রস্তুতি। আজ ইতিমধ্যেই সেখানে পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। দুপুর পেরোলেই শুরু হবে সন্ধিপুজো। গত দু’বছর করোনার কারণে বন্ধ থাকলেও, এবছর ফের কুমারী পুজো হচ্ছে বেলুড়ের পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলে। কুমারী পুজোর সময় দেবী দুর্গার নয়টি রূপের কথা মাথায় রেখে নয়জন মেয়েকে সাজানো হয়। তাদের খাওয়ানো হয়। পরানো হয় লাল চুড়ি। দেওয়া হয় নারকেল, চাল এবং সামর্থ্য মত অর্থ। অষ্টমীর সকালে কুমারীকে গঙ্গার পবিত্র জলে স্নান করিয়ে শুদ্ধ করে লাল বেনারসী শাড়ি পরানো হয়। ফুলের গয়না দিয়ে সাজানো হয়। পায়ে পরানো হয় আলতা। পুজো না হওয়া পর্যন্ত উপবাস করতে হয় কুমারীকে। এরপর যথাসময়ে দেবী দুর্গার মূর্তির সামনে কুমারীকে বসিয়ে দেবীর হাতের একটি পদ্মফুল তার হাতে দিয়ে পুজো আরম্ভ করা হয়। ১৬টি উপকরণ দিয়ে শুরু হয় কুমারী পুজোর আচার। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস এই পাঁচ উপকরণ দিয়ে করা হয় কুমারীর উপাসনা।