দেবীর বোধন হতে বাকি মাত্র একদিন। ইতিমধ্যেই পুজোর আবহে মেতে উঠেছে আপামর বাঙালি। মণ্ডপে মণ্ডপে জমছে ভিড়। দুর্গাপ্রতিমা বলতেই আমাদের মনে ফুটে উঠে দেবীর দশ হাতে দশ প্রহরণ। তার মধ্যে প্রধান অস্ত্র ত্রিশূল দিয়ে তিনি বধ করছেন মহিষাসুরকে। এই দশভুজা রূপেই বাংলায় উপাসিত হন দুর্গা। কিন্তু ব্যতিক্রম দেখা যায় বাংলার এক সাবেকি ও বনেদি পুজোয়। সেখানে দেবীর সমগ্র রূপের নয়, কেবল তাঁর মুণ্ডটির আরাধনা করা হয়। শুধু দুর্গার মুখাবয়বকেই পুজো করেন পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের রায় পরিবারের সদস্যরা। এই দেবী মহিষাসুরমর্দিনী নন। কোনও অস্ত্র নেই। কারণ, হাতই যে নেই এই দেবীর। প্রায় সাড়ে চারশো বছর ধরে এমনই রেওয়াজ চলে আসছে কেতুগ্রামের রায়বাড়িতে। এই পুজোয় অন্নভোগ হয় না। পুজোয় নেই চণ্ডীপাঠের রীতিও। দশমী তিথিতে বিসর্জনের আগে দোলায় চাপিয়ে দুর্গামূর্তিকে ঘোরানো হয় গ্রামে। আর বিসর্জনের পর পুকুরপাড় দিয়ে শঙ্খচিল ওড়া দেখে বাড়ি ফেরেন পরিবারের সদস্যরা।
কথিত আছে যে, রায় পরিবারের এক পূর্বপুরুষ, ধনী ব্যবসায়ী গোবিন্দ রায়ের উদ্যোগেই এখানে দুর্গাপূজার সূচনা হয়েছিল। কারও কারও মতে, প্রথম বারের দুর্গাপুজোয় দশভুজার মূর্তিই ছিল। তবে পুজো শুরু হতেই সে মূর্তি ভেঙে পড়ে। অবশিষ্ট থাকে কেবল মূর্তির মাথা থেকে গলা পর্যন্ত। আর এরপরেই নাকি দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন গোবিন্দ রায়। ওই রূপেই পূজা হোক তাঁর, দেবী স্বয়ং এমনটাই চেয়েছিলেন বলে শোনা যায়। আর সেই কারণেই এর পর থেকে দেবীর কেবলমাত্র মুণ্ডটিরই আরাধনা শুরু করে এই পরিবার। পাশাপাশি, শোনা যায় একেবারেই ভিন্ন আরেকটি মত। তা অনুযায়ী, গ্রামের বাইরে ঠাকরুন পুকুরে স্নানের সময় একদা এক অপরূপ সুন্দরী নারীর দেখা পেয়েছিলেন গোবিন্দ রায়। পুকুরে স্নানরত ওই রমণীর মাথা থেকে গলাটুকুই জলের বাইরে ছিল৷ কিন্তু তাঁকে দেখা পাওয়া মাত্রই নিমেষে অদৃশ্য হয়ে যান ওই নারী। স্বপ্নাদেশের সূত্র কিন্তু রয়েছে এ গল্পেও। স্বপ্নাদেশের পরই দেবীদর্শনের সেই স্মৃতিকে মনে রেখেই কাটা মুণ্ডের পুজো শুরু হয় রায় পরিবারে। সাড়ে চারশো বছর পার করে বয়ে চলেছে সেই ঐতিহ্যবাহী পরম্পরা।