রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন পল্লীবাংলার শিল্পীরা। কিছুদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন কচুরিপানা ও কাশফুল দিয়ে জিনিস তৈরির কথা। এবার রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামে এই কচুরিপানা দিয়ে তৈরি হচ্ছে ঘর সাজানোর জিনিস। তাও আবার মুখ্যমন্ত্রীর এই পরামর্শের আগে থেকেই। সৌখিন আয়না, পাপোশ, ফুলদানি, ব্যাগ, ফুলের সাজি, ফল রাখার পাত্র ইত্যাদি রকমারি দ্রব্য। আর ক্ষুদ্র হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে বেঁচে রয়েছে বেশ কতগুলি পরিবারও। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলির বিদ্যানগরে বড়কোবলা গ্রামে গেলেই দেখা মিলবে এই শিল্পের। মহিলাদের হাতের ছোঁয়ায় একের পর এক কচুরিপানা দিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে বিভিন্ন দ্রব্য। যা তৈরি করে স্বনির্ভর হচ্ছেন এই গ্রামের মহিলারা।
বিদ্যানগরের বাসিন্দা রাজু বাগ। তিনি পেশায় একজন ডিজাইনার। পড়াশোনা করেছেন শান্তিনিকেতনের ডিজাইন বিভাগে। তাঁর কথায়, করোনার সময়ে বাইরের রাজ্য থেকে কাজ হারিয়ে বাড়ি ফিরে আসতে হয় অনেককে। রাজু নিজেও কাজ হারিয়ে বাড়িতে ফেরেন। তাঁর মতো অনেকেই রোজগারহীন। যেহেতু কাজ নেই, সেই কারণে অবসর সময় কাটে বাড়ির সামনে। এরপর একদিন রাজু বাগের মাথায় আসে, গ্রাম গঞ্জে জলাশয়ের কচুরিপানা থেকে কি কিছু বানানো যায়। যা থেকে এলাকার মানুষজনের রোজগার হতে পারে। বাড়ির সামনেই মস্ত বিল। যাতে অফুরন্ত কচুরিপানা। সেই মতই কিছু কচুরিপানা তুলে রোদে শুকিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে একের পর এক সৌখিন দ্রব্য বানিয়ে ফেলেন রাজু।
এরপর রোজগারহীন পরিবারের মহিলাদের বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে কচুরিপানা হস্তশিল্প শুরু হয়।
উল্লেখ্য, ৩০-এর বেশি মহিলারা ট্রেনিং নিয়ে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। এলাকার পুরুষরা পেয়েছেন বাড়তি রোজগার। কারণ গ্রামে জলে ডোবায় আগাছার মতো ফুটে থাকে কচুরিপানা। যা তুলে বিক্রি করলেই কেজি প্রতি মেলে ৩০ টাকা। রাজু বাগ জানাই প্রকল্পে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ তাঁকে বিশেষ ভাবে সাহায্য করেছেন।খাদি সংস্থা থেকে এখানে তৈরি কচুরিপানার দ্রব্য বিক্রিতে ও কিনতে পাশে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে কচুরিপানার বিভিন্ন দ্রব্য অনুযায়ী মহিলারা দৈনিক রোজগার করেন ২০০-২৫০ টাকা। এখানে তৈরি হওয়া কচুরিপানার দ্রব্য বিক্রির জন্য পৌঁছে যায় রাজ্য ছাড়িয়ে হায়দ্রাবাদ, জামসেদপুর,কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায়। দ্রব্যগুলির চাহিদাও পৌঁছেছে চরমে।