মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বারবার বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। প্রধানমন্ত্রীর নানান হঠকারি ও তুঘরকি সিদ্ধান্তের জন্য ভোগান্তির কবলে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। যার অন্যতম জ্বলন্ত উদাহরণ হল নোটবন্দি। বিগত ২০১৬ সালের ৮ই নভেম্বর আচমকাই রাত আটটার সময় ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটকে বাতিল বলে ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চরম দুর্ভোগের শিকার হয় আমজনতা। ক্রমেই বেড়ে চলে সমস্যা। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের মতে, আজও নোটবন্দির মতো অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের মূল্য চোকাতে হচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতিকে। মোদীর নোটবন্দির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিরোধীদের মধ্যে প্রথম সরব হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওইদিন নোটবন্দির ঘোষণার দু-ঘন্টা পর রাত ১০ টা ১৯ নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটে লেখেন, “WITHDRAW THIS DRACONIAN DECISION”। তারপর পেরিয়ে গিয়েছে ছ-ছটা বছর। ভারতের অর্থনীতি সেই তিমিরেই। আজ মোদী সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে মামলা উঠতে চলেছে আদালতে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত সঠিক না ভুল তার উত্তর এখনও অজানা। যদিও মোদী সরকারের দাবি, নোট বাতিল সফল। তবে অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, নোট বাতিল একটি ভুলেভরা পদক্ষেপ ছাড়া কিছুই নয়। নোটবন্দি দেশের অর্থনীতিকে ক্রমশ অন্ধকারের দিকেই ঠেলে দিয়েছে। আজও কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি মোদী সরকারের তরফে। অন্যদিকে, দেশের শীর্ষ আদালতে নোট বাতিলের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দায়ের হওয়া মামলার শুনানি চলছে। বিচারপতি আব্দুল নাজিরের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে বুধবার ওই মামলার শুনানি হবে। ছয় বছর আগে নোট বাতিলের কারণে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল সাধারণ মানুষকে। চরম সংকটে পড়ে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাও। ব্যাঙ্ক ও এটিএমের বাইরে লম্বা লাইন পড়ে যায়। লাইনে দাঁড়িয়ে সারা দেশে নব্বই জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা নিয়ে ওঠে নানান প্রশ্ন। যদিও মোদী সরকার ক্রমাগত দাবি করে, এতে দুর্নীতি, কালো টাকা কমবে, অর্থনীতির উন্নতি হবে। যদিও বাস্তবে সে গুড়ে বালি! ওই দাবির সমর্থনে উপযুক্ত তথ্য পেশ করতে পারেনি মোদী সরকার। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বেশ কিছু সংগঠন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়। ২০১৬ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মামলাটি পাঠানো হয় সাংবিধানিক বেঞ্চে। আজ, ২৮ই সেপ্টেম্বর, দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর ওই মামলার শুনানি আরম্ভ হতে চলেছে। যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।