রবিবারই শুরু হয়ে গিয়েছে দেবীপক্ষ। আর মাত্র কয়েকদিন। তারপরই দুর্গোৎসবের আনন্দে মেতে উঠবে আপামর বাঙালি। জোরকদমে চলছে পুজোর তোড়জোড়। আজ জেনে নেওয়া যাক বাংলার আরও সাবেকি দুর্গাপুজোর কথা। সুরুলের জমিদার বাড়িতে পুরনো রীতি মেনে আজও চলে উমা আরাধনা। শামিল হন বহু মানুষ। শহরের কোলাহল থেকে যা অনেকটাই দূরে।পাঁচ খিলানের ঠাকুরদালান, সামনে থামযুক্ত নাটমন্দির, নানারঙের কাঁচের ফানুস আর বেলজিয়াম কাঁচের ঝাড়বাতিতে লেগে আছে ঐতিহ্যের ছোঁয়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম বাংলার বহু পুজোকে আধুনিকতা গ্রাস করলেও বীরভূম সুরুলের সরকার বাড়ির পুজোর পরিবর্তন হয়নি। দীর্ঘ ২৮৮ বছর ধরে একইভাবে পূজিতা হয়ে আসছেন দেবী। এখনও ডাকের সাজে সাজানো হয় প্রতিমা। পরানো হয় সোনা ও রূপোর গয়না। প্রতিমার রঙ তপ্তকাঞ্চন। শিব ও দুর্গার বিয়ের দৃশ্য আঁকা থাকে চালচিত্রে।
উল্লেখ্য, বিগত অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বর্ধমানের নীলপুরের ঘোষবাড়ির ছেলে ভরতচন্দ্র সস্ত্রীক চলে আসেন সুরুলে। তাঁর গুরু বাসুদেব ভট্টাচার্যের বাড়িতে। সুরুল ছিল বৈষ্ণব ধর্মগুরুর শ্রীপাট। ভরতচন্দ্র গুরুদেবের শ্রীপাট ছেড়ে আর ফিরে যাননি বর্ধমানে। তাঁর পুত্র কৃষ্ণহরি ও তাঁর ছেলেরা সেই সময় ফরাসি ও ইংরেজ কুঠিয়ালদের সঙ্গে ব্যবসা করে পরিবারের শ্রীবৃদ্ধি করেন। সুরুল রাজবাড়ির সঙ্গে ঠাকুর বাড়ির সম্পর্ক ছিল বেশ নিবিড়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই সরকার বাড়ি গিয়ে বেশ কিছুদিন সময় কাটিয়েছেন। এছাড়াও মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে বেশ কিছু জমি রাজপরিবার তরফ থেকে প্রদান করা হয়। এখনও সপ্তমীর সকালে পালকি, নহবহ-সহ ঘট ভরতে যান সুরুলের দুই তরফের পুজো উদ্যোক্তারা। ফিরে এসে নাড়ুর হরিলুঠ করেন বাড়ির এয়োস্ত্রীরা। তখন নিচে আঁচল পেতে দাঁড়ান এলাকার মায়েরা। বহু জমিদারবাড়ির পুজোর ঠাটবাট আজ বিমর্ষ। ব্যতিক্রম সুরুল সরকার বাড়ি। অর্থ বা পারিবারিক সমস্যা কোনও দিন পুজোয় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি। আবহমানের সুরে আজও তা অব্যাহত।