পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ। আর মাত্র কয়েকদিন। তারপরই দুর্গোৎসবের আনন্দে মেতে উঠবে সারা বাংলা। তবে এই পুজো সবার কাছেই সমানভাবে হর্ষ-উল্লাসের নয় কিন্তু। কারও কারও কাছে তা গভীর বিষণ্ণতার বাহকও। দেবী দুর্গার হাতেই বধ হতে হয়েছিল মহিষাসুরকে। এই কারণে পুজোর কয়েকটা দিন দুর্গার মুখদর্শন পর্যন্ত করেন না ডুয়ার্সের অসুর সম্প্রদায়ের মানুষজন। ডুয়ার্সের নাগরাকাটা ব্লকের ভুটান সীমান্ত লাগোয়া কেরন চা বাগানে একটি অংশে অসুর জনজাতির মানুষের বাস। দীর্ঘ কয়েক দশক এই চা বাগান এলাকায় রয়েছেন তারা। সর্বসাকুল্যে ৩৫০-৪০০ জন অসুর সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন এই গ্রামে। এই চা বাগান এলাকায় দুর্গাপুজোর আয়োজন হলেও অনুষ্ঠানে শামিল হন না অসুর জনজাতির মানুষজন। সেই সময় কার্যত নিজেদের বাড়িতে বন্দি থাকেন তাঁরা। কারণ, তাঁদের কাছে মা দুর্গার মুখ দেখা নিষিদ্ধ। তবে সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি এখন বদলেছে। আজকের সময়ে তাঁদের অনেকেই পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন।
উল্লেখ্য, একদা অসুর জনজাতির বাড়ির ছোটদের রীতিমতো সাবধান করে দেওয়া হত, যাতে তারা পুজোর মণ্ডপের দিকে পা না বাড়ায়। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে পুজো মণ্ডপে যেতে সেই ভাবে আর বাধা দেওয়া হয় না। তবে এখনো অনেক অসুর সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন, যারা পুজো মণ্ডপ থেকে দূরেই থাকেন। অসুর জনগোষ্ঠীর প্রবীণ সুকনা অসুর বলেন, “পুজোয় মণ্ডপে যাই না। প্রসাদও খাই না। আসলে অসুর আমাদের রাজা ছিলেন। তাঁকে বধ করেছিলেন মা দুর্গা। তাই পুজোয় যাই না। এখন বাড়ির ছোটরা আর এসব মানে না। মণ্ডপে চলে যায়। বড়রা এখনও যায় না। আমাদের বড়রা আমাদের বারবার বলতেন পুজোয়া যাওয়া যাবে না।” অন্যদিকে, তৃণা অসুর নামে এক তরুণীর গলায় ফুটে উঠেছে বিপরীত সুর। “আমরা পুজোয় দেখতে যাই। নতুন কাপড়ও পরি। কেউ বাধা দেয় না” জানিয়েছেন তিনি।