আজ মহালয়া। পিতৃপক্ষের শেষ দিন। গঙ্গার ঘাটে ঘাটে চলছে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ। শুধু পিতৃপুরুষ নয়, হিন্দু ধর্মে এই লগ্নে যাঁদের পুত্র নেই, যাঁদের কেউ নেই, তাঁদেরও স্মরণ করা হয়। বলা হয়, ‘ওঁ নমঃ যে বান্ধবা অবান্ধবা বা, যে অন্য জন্মনি বান্ধবাঃ। তে তৃপ্তিং অখিলাং যান্ত, যে চ অস্মৎ তোয়-কাঙ্খিণঃ’। অর্থাৎ যাঁরা আমাদের বন্ধু ছিলেন, যাঁরা বন্ধু নন, যাঁরা জন্ম-জন্মান্তরে কখনও আমাদের বন্ধু ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে যাঁরা আমাদের কাছে জল পেতে চান, তাঁরা সম্পূর্ণরূপে তৃপ্তিলাভ করুন।’
মহালয়া হল পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণ। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী অমাবস্যা র্পযন্ত, যা আশ্বিনে এসে পৌঁছয় সময়কে পিতৃপক্ষ বলে। পুরাণমতে, ব্রহ্মার নির্দেশে পিতৃপুরুষরা এই ১৫ দিন মনুষ্যলোকের কাছাকাছি চলে আসেন। এই সময় তাঁদের উদ্দেশ্যে তাই কিছু অর্পণ করার রীতি। লোকবিশ্বাস, এই সময়ে আত্মাদের উদ্দেশ্যে কিছু অর্পণ করা হলে তা সহজেই তাঁদের কাছে পৌঁছয়।
হিন্দুশাস্ত্রে নানা রকম তর্পণের উল্লেখ রয়েছে। দেব তর্পণ, গুরু তর্পণ, মনুষ্য তর্পণ, ঋষি তর্পণ, দিব্যপিতৃ তর্পণ, যম তর্পণ, ভীষ্ম তর্পণ, পিতৃ তর্পণ, মাতৃ তর্পণ, অগ্নিদগ্ধাদি তর্পণ, রাম তর্পণ ও লক্ষণ তর্পণ। পিতৃপক্ষের অবসানের দিনে যে মন্ত্রোচ্চারণ করা হয় তাতে রয়েছে— ‘আব্রহ্ম স্তম্বপর্য্যন্তং জগত্তৃপ্যতু’। স্তম্ব শব্দের অর্থ তৃণগাছি। অর্থাৎ ব্রহ্মা থেকে তৃণগাছি পর্যন্ত সবাইকে জল দেওয়া যায় একই মন্ত্রে। পশু, মানুষ, আত্মীয়-অনাত্মীয়, জাত-বেজাত কোনও ফারাক না দেখে সকলের শুভকামনার দিন মহালয়া।