২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের ভোট প্রচার কালে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা অবতারে দেখা গিয়েছিল। ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন তিনি৷ পরবর্তী কালে দেখা যায় তার অধিকাংশই ছিল জুমলা। বিগত কয়েক বছরেই দেশবাসী বুঝে গিয়েছেন জুমলাবাজি আর নরেন্দ্র মোদী সমার্থক। তবে কেবল রাজনৈতিক মঞ্চে মিথ্যে প্রতিশ্রুতির ফোয়ারা ছোটানো নয়; নিজেকে নিয়েও মিথ্যার বেসাতি করতে ছাড়েন না মোদী।
২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে মোদীকে চাওয়ালা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল। মোদী নিজেও প্রচার করতেন, গুজরাতের ভডনগর স্টেশনে বাবার চায়ের দোকানের মাধ্যমে অতি কষ্টে দিন গুজরান করতেন তাঁরা, তিনি নিজেও কাজ করতেন দোকানে। হরিয়ানার আইনজীবী তথা সমাজকর্মী পবন পারীক মোদীর বাবা দামোদরদাস মোদীর চায়ের দোকান সম্পর্কে আরটিআই করলে, পশ্চিম রেল জানিয়েছিল, এই বিষয়ে তাদের কাছে কোনও তথ্য নেই!
মোদী নানা অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন, তেমনই একদা কুমিরের বাচ্চাকে ধরে বাড়িতে নিয়ে আসার গপ্পো বলেছিলেন তিনি। যদিও তার কোনও প্রমাণ মেলেনি। একটা সময় পর্যন্ত শোনা যেত এন্টার পলিটিক্যাল সায়েন্সে মোদী স্নাতকোত্তর করেছেন। ভূ-ভারতে বা পৃথিবীর কোনও প্রান্তে এমন বিষয়ে অধ্যয়ন হয় বলে জানা যায়নি। আবার, মোদীর মোহমায়ামুক্ত-নির্লোভ ইমেজ গড়তে, তাঁকে অকৃতদার হিসেবে একটা সময় অবধি প্রচার চালাত বিজেপি। কিন্তু হঠাৎ করেই সামনে চলে আসেন মোদী বিয়ে করা স্ত্রী।
কয়েক বছর আগেই মোদী দাবি করেছিলেন, তিনি নাকি ১৯৮৭-৮৮ সাল নাগাদ ডিজিটাল ক্যামেরা এবং ই-মেল ব্যবহার করেছিলেন। সেই সঙ্গেই নিজেকে দেশের প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহারকারী ব্যক্তি বলেও দাবি করেছিলেন। কিন্তু জাপানি ক্যামেরা প্রস্তুতকারী সংস্থা নিকন প্রথম বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য ডিজিটাল ক্যামেরা বাজারে আনে ১৯৮৬ সালে। এর অনেক পরেই ডিজিটাল ক্যামেরা ভারতে এসেছিল। ই-মেল প্রথম চালু হয় ১৯৯৫ সালে, কারণ ১৯৯৫ সালেই বিএসএনএল প্রথম দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা শুরু করে।
বাংলার বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মোদী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রেমী হয়ে গিয়েছিলেন। মন কি বাতে একদিন তিনি বলে বসেন, তিনি নাকি ছোটবেলায় ভোর সাড়ে পাঁচটায় রেডিয়োতে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতেন। প্রসঙ্গত, আকাশবাণী কলকাতার সম্প্রচার শুরু হয় ভোর ৫টা বেজে ৫০ মিনিটে। কলকাতা ক-এ রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুষ্ঠানের জন্য বাঁধা সময় সকাল ৭টা ৪৫ মিনিট। তার আগে ৬টা ১০ মিনিটে মূলত ভক্তিগীতির একটি অনুষ্ঠান থাকত।
এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে গিয়ে মোদী দাবি করেছিলেন বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের জন্যে তিনি সত্যাগ্রহে যোগ দিয়ে কারাবাস করেছেন। কিন্তু জানা গিয়েছে সে সময় তেমন কোনও কর্মসূচিই হয়নি। মোদীর জেল খাটার বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে করা আরটিআইয়ের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর স্পষ্ট জানায় তাদের কাছে এমন কোনও তথ্যই নেই। ফলে মোদী আর মিথ্যাচার যে ক্রমশই সমার্থক হয়ে উঠেছে সে কথা বলাই বাহুল্য।