গত দু’বছর করোনা মহামারীর পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছে সবকিছু। চেনা ছন্দে ফিরছেন সাধারণ মানুষ। আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপর বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। এবার নদিয়া থেকে মা দুর্গা পাড়ি দিচ্ছে সুদূর আমেরিকায়। উচ্চতা এবং চওড়া মাত্র এক ফুট করে। নদিয়ার কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণির পুতুলপট্টির বিখ্যাত মৃৎশিল্পী সুবীর পালের হাতে তৈরি এই দুর্গা প্রতিমা এবার যাচ্ছে আমেরিকা। জানা গিয়েছে, আমেরিকায় থাকা প্রবাসী বাঙালি একটি পরিবার ভারতে এসেছিলেন মাস তিনেক আগে। সেই সময় কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণির পুতুলপট্টির বিখ্যাত মৃৎশিল্পী সুবীর পালের কাছ থেকে একটি ফাইবারের দেড় ফুট উচ্চতার রাধাকৃষ্ণ এবং মা লক্ষ্মীর মূর্তির অর্ডার দিয়েছিলেন। সেই অর্ডার দিতে এসে সুবীর পালের কারখানায় থাকা দুর্গাপ্রতিমার প্রতি উৎসাহ তৈরি হয়। রাধাকৃষ্ণ, মা লক্ষ্মীর সঙ্গে তারা মা দুর্গাকেও নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছেপ্রকাশ করেন। এরপরই তুলো-মাটি ও তার দিয়ে প্রবাসী বাঙ্গালী পরিবারের জন্য দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন মৃৎশিল্পী।
সুবীর পাল জানিয়েছেন, “আমি নিজের হাতে সেই প্রতিমা তৈরি করছি। আগে আমেরিকায় বসবাসকারী ওই পরিবারের লোকজন আমার এখানে এসে প্রায় দেড় ফুট উচ্চতার ফাইবারের রাধাকৃষ্ণ ও মা লক্ষ্মী মূর্তি অর্ডার দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই মূর্তি তৈরির কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু কিছুদিন আগে তাদের দুর্গা প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে। সেই মতো তারা দুর্গা প্রতিমা তৈরির অর্ডার দিয়ে যান।” ইউনেস্কো দুর্গোৎসবকে হেরিটেজ সম্মান দেওয়ার পর থেকে ছোট দুর্গা প্রতিমার চাহিদা ভীষণ বেড়েছে। বিদেশ থেকে আসছে ছোট আকারের দুর্গাপ্রতিমার অর্ডার। কেউ পুজো করার জন্য, কেউ আবার শুধুমাত্র দুর্গাপ্রতিমাকে ঘরে সাজিয়ে রাখার জন্যই নিচ্ছেন। সুবীর পালের কথায়, “আমি যে প্রতিমাটি তৈরি করছি, সেটি মহালয়ার দিন অথবা তারপরের দিন নিয়ে যাবেন প্রবাসী বাঙালি ওই পরিবারের লোকজন। বর্তমানে মাটির কাজ চলছে। এরপরই শুরু হবে রংয়ের কাজ।” বর্তমানে ৫২ বছর বয়স হলেও সেই ছোট্ট বয়স থেকেই মৃৎ শিল্পের কাজ করে যাচ্ছেন সুবীর পাল। মাত্র ১২ বছর বয়সে ১৯৮২ সালে লন্ডনে ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি। ১৯৮৫ সালে আমেরিকায় ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালে যোগ দিয়েছিলেন। এছাড়া জার্মানি ও স্পেনে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালেও তিনি যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। মৃৎশিল্পের ইতিহাসে প্রথম তিনি ডক্টরেট উপাধি পেয়েছেন আলপস ইউনিভার্সিটি থেকে। এছাড়াও সুবীর পালের নাম রয়েছে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস, ইউনিক ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এবং লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে।