একবছর আগেও সুন্দরবনের গ্রামে গ্রামে শুরু হয়েছিল ‘সেভ টাইগার, সেভ বেঙ্গল’ প্রচার। দিন দিন কমছিল রয়্যাল বেঙ্গলের সংখ্যা। তবে বর্তমানে বদলে গিয়েছে বলা যায় উল্টে গিয়েছে সেই ছবি। বাংলাদেশ থেকে দলে দলে রয়্যাল বেঙ্গল ঠাঁই নিয়েছে এপার বাংলার সুন্দরবনে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে এই মুহূর্তে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা কমবেশি ১২৩টি। ‘‘গতবছরের বাঘ শুমার অনুযায়ী আমাদের রাজ্যের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৯৬টি। এ বছরের শুমারের তথ্য ও ছবি হায়দরাবাদে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এখনও আসেনি। তবে সংখ্যা বাড়ার ঈঙ্গিত মিলেছে। নতুন ২৭টি বাঘের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে,’’ বলছেন বনমন্ত্রী। তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘শুমার করতে গিয়ে সুন্দরবন এলাকায় রামগঙ্গা ও অন্যান্য এলাকায় অন্তত পাঁচটি দ্বীপে বাঘের সন্ধান মিলেছে। এই দ্বীপগুলিতে টাইগার রিজার্ভ এরিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এখানকার সংখ্যাটাও যোগ হবে। আগামিদিনে এখানকার বাঘেরাও বাচ্চার জন্ম দেবে। সংখ্যায় বাড়বে।’’
রাজ্যের এক শীর্ষ বনকর্তা জানান, ‘সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গ কিমি। তার মধ্যে অধিকাংশটাই বাংলাদেশের অন্তর্গত, ৬০০০ কিমি। বাকি ৪০০০ কিমি ভারতে। আয়তনে বড় হলেও বাংলাদেশের বাদাবনে বাঘের খাবার নেই বললেই চলে। আর এই রাজ্যের গ্রামে বাঘ ঢোকা রুখতে জঙ্গলে খাবারের জোগান অক্ষুণ্ণ রাখতে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। সেই টানেই সীমান্ত পেরিয়ে বাঘের ভারতে প্রবেশ। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে ৪০০-র কাছাকাছি বাঘ ছিল। ২০১৭-য় সেই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছিল ১৫০-এ।’’ এ প্রসঙ্গে বনমন্ত্রী বলছেন, ‘‘জঙ্গলে খাবারে টান ধরলেই বাঘ গ্রামে ঢুকে পড়ে। সে কারণে বাঘ নিয়ে মাস্টার প্ল্যান বানানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাদাবনে বাঘের খাদ্যের ভাঁড়ারে যাতে টান না ধরে, তা নিয়েও স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশ মেনে নৌকায় চাপিয়ে হরিণ ও শূকর নিয়মিত ছেড়ে দিয়ে আসা হয় গভীর জঙ্গলে বাঘের এলাকায়। আর ওদিকে বাংলাদেশের জঙ্গলে খাবার নেই। তাই বাঘ এদেশে চলে আসছে। বাংলাদেশে ১২০টার মতো বাঘ আছে আপাতত। বাকিরা সবাই এপারে।” তিনি জানান, সুন্দরবনবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গ্রামগুলিকে বিশেষ ‘অ্যালিমুনিয়াম ফ্লেক্সিবল’ তারজাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় গন্ডার সংরক্ষণ সংক্রান্ত পুরনো আইন প্রত্যাহার করে একটি বিল জমা দিয়েছেন বনমন্ত্রী। এই বিল পাস হলে গন্ডার শিডিউল-এ ক্যাটাগরি হিসাবে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনের অন্তর্ভুক্ত হবে।