পুজোর আর বাকি নেই একমাসও। ইতিমধ্যে কেনাকাটাও শুরু করে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। নিশ্চয়ই ভাবছেন কোনদিন কোথায় কোথায় ঠাকুর দেখবেন? তাহলে তালিকায় রাখুন পান্ডুয়ার জমিদার বাড়িকে। সেই দুর্গাপুজোর ভার স্কুল পড়ুয়াদের হাতে, জানুন সেই রোমহর্ষক ইতিহাস। জমিদার বাড়ি পরিবর্তিত হয়েছে স্কুলে। তবুও জমিদার বাড়ির প্রথা মেনেই আজও হয় দুর্গাপুজো। পান্ডুয়ার বৈঁচি গ্রামের জমিদার বিহারীলাল মুখোপাধ্যায় পৈত্রিক বাড়ির পুজোর উত্তরাধিকারী এখন স্কুল পড়ুয়ারা। এখনও পুরাতন প্রথা মেনেই স্কুলে আয়োজিত হয় দুর্গোৎসব। বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকারা মিলে এই দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন। স্কুল পড়ুয়াদের কাছে দুর্গাপুজোর চার দিন বিশেষ আনন্দের। তাই আনন্দের সঙ্গে ১৮৬ বছরের ঐতিহ্যবাহী পুজো ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে আজও। জমিদার বিহারীলাল মুখোপাধ্যায়ের বাবা ঠাকুর দাস মুখোপাধ্যায় এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। সেই থেকেই আজও নিষ্ঠার সঙ্গে এই পুজো হয়ে আসছে। বিহারীলাল মুখোপাধ্যায় ছিলেন নিঃসন্তান। ১৮৭০ সালে বিহারীলাল মুখোপাধ্যায় দলিল করেন, সেখানে তিনি লেখেন আমার যা সম্পত্তি ও পুজোর সমস্ত কিছুই এই থেকে চলবে।
সেই আমলে জমিদার বাড়ির গায়ে বড় বড় খিলান দেওয়া নাট মন্দির তৈরি করা হয়। সেখানেই মা দুর্গা ও জগদ্ধাত্রীর পুজো হয়। ১৮৭৭ সালে বিহারীলাল উচ্চ অবৈতনিক বিদ্যালয় ও একটি দাতব্য চিকিৎসালয় তৈরি করেন বৈঁচি গ্রামে বিদ্যাসাগরের পরামর্শে। সেই থেকেই স্কুলের জমিদার বাড়িতেই আজও পুজো হয়ে আসছে। পুজোর দিনগুলিতে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী এলাকার মানুষ ও শিক্ষকরা একসঙ্গে মেতে ওঠেন পুজোর আনন্দে। পুরনো প্রথা মেনেই আজও একচালা দুর্গা মূর্তি তৈরি করা হয়। সিংহ বাহিনী মা দুর্গার সঙ্গে লক্ষী, গণেশ, সরস্বতী, কার্তিক ও মহিষাসুর রয়েছে একচালাতেই। টানা চোখের বাংলা মুখের আদলে এই মূর্তি হয়। মহিষাসুরের গায়ের রঙ এখানে সবুজ। স্কুলেই ঠাকুর তৈরি করা হয়। পরে মূল বেদীতে বসানো হয় দেবীকে। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত বৈদিক মতে মা পুজো হয়। আগে ছাগ বলি প্রথা থাকলেও কলের নিয়মে তা বদলে গিয়ে এখন ছাঁচি কুমড়ো, কলা ও আখ বলি হয়। আগে দশমীর দিন আগে কাঁধে করে চার পাড়া ঘুরিয়ে প্রতিমাকে নিরঞ্জন করা হতো স্কুলেরই একটি পুকুরে। কিন্তু লোকের অভাবে বর্তমানে তা বন্ধ। এখন ট্রাক্টারে করে চার পাড়া ঘুরিয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়।