তথৈবচ দেশের অর্থনীতির হাল। মোদী সরকারের আমলে যদিও এমনটা নতুন নয়। মূল্যবৃদ্ধির হার কোনভাবেই ৬ শতাংশের নীচে নামছে না। দুর্ভোগ বাড়ছে আমজনতার। দীর্ঘদিন ধরেই থমকে দেশের অর্থনীতি। জিডিপি বৃদ্ধির হারও প্রত্যাশার অনেক আগেই রুদ্ধ। জিএসটি সংগ্রহও খুবই উদ্বেগজনক। উৎসবের মরশুমের আগে জিএসটি খাতে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশি আদায় কমেছে মাত্র এক মাসের মধ্যেই। চলতি বছরের জুলাই মাসে মোদী সরকার দেশজুড়ে জিএসটি খাতে ১ লক্ষ ৪৮ হাজার কোটি টাকা আয় করেছিল। ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত অর্থমন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, আগস্ট মাসে ৫ হাজার কোটি টাকা কমে তা ১ লক্ষ ৪৩ হাজার কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রক আশাবাদী ছিল, জুলাইয়ের তুলনায় আগস্ট জিএসটি সংগ্রহের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু সেগুড়ে বালি পড়েছে। বিজেপির গলা ফাটিয়ে প্রচার করা ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলি জিএসটি আদায় খাতে মুখ থুবড়ে পড়েছে। মোদীর রাজ্য গুজরাত, বিজেপি জোট-শাসিত মহারাষ্ট্র, যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশ এবং বিজেপিশাসিত মধ্যপ্রদেশ জিএসটি আদায় খাতে ধাক্কা খেয়েছে। ব্যতিক্রমীভাবে সেখানেই উজ্জ্বল বাংলা। বাংলায় জিএসটি খাতে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আদায় বেড়েছে। অর্থনীতি বিরোধীদের শত আক্রমণ, মোদী সরকারের ক্রমাগত বঞ্চনা সত্ত্বেও এগিয়ে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের এপ্রিলের পর থেকেই জিএসটি খাতে আদায় কমছে। জুলাইতে কিছুটা বাড়লেও আগস্ট মাসে চরম ধাক্কা খেয়ে একেবারে তলানিতে জিএসটি আদায়। দেশজুড়ে শুরু হচ্ছে উৎসবের মরশুম, তার ঠিক প্রাক মুহূর্তে এই ধাক্কায় দিশেহারা অর্থ মন্ত্রক। উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। জিএসটি আদায় বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে সবথেকে বেশি হারে কমেছে। জুলাই মাসে মোদীর রাজ্য গুজরাতে ৯ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা আদায় হলেও, আগস্টে ৫০০ কোটি টাকা কমে ৮ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। মহারাষ্ট্রে এক মাসের মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা কমে, ১৮ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে আদায়ের পরিমাণ। দুমাস ধরে মহারাষ্ট্রে বিজেপি জোট সরকার চালাচ্ছে। অন্যদিকে ক্রমেই এগিয়ে চলেছে বাংলা। যেখানে শিল্পরাজ্য হিসেবে খ্যাত ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্যগুলি মুখ থুবড়ে পড়েছে, সেখানেই উল্টো পথে হেঁটে ওই খাতে বাংলায় আদায় বেড়েছে অনেকটাই। আগস্ট মাসে বাংলার জিএসটি সংগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। জুলাই মাসে বাংলা ওই খাতে ৪ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা আয় করেছিল। বিগত মাসে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বেড়ে বাংলা ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আয় করেছে। গত ৩১শে আগস্ট জিডিপি বৃদ্ধিহার প্রকাশ করা হয়েছে। পরিসংখ্যান একেবারেই আশাপ্রদ নয়। ক্রমহ্রাসমান জিএসটি আদায়ের প্রবণতা নতুন করে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। দেশের অর্থনীতিকে ক্রমশই তলিয়ে যাচ্ছে আঁধারে, যা দেখে প্রমাদ গুনছেন বিশেষজ্ঞরা।