বরাবরই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে ‘পাপ্পু’ ফলে বিদ্রূপ করে থাকেন মোদী-শাহ। এবার সেই একই বিশেষণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে কটাক্ষ করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, “ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় ‘পাপ্পু’ অমিত শাহ।” পাশাপাশিই তাঁর আরও বক্তব্য, দিল্লীর ‘জল্লাদ’-দের কাছে তিনি মাথা নত করবেন না। শুক্রবার প্রায় সাত ঘণ্টা ইডির জিজ্ঞাসাবাদের পর বেরিয়ে এসে এভাবেই অমিত শাহকে একহাত নিলেন অভিষেক। অমিত-পুত্র, বিসিসিআইয়ের সচিব জয় শাহের সাম্প্রতিক জাতীয় পতাকা হাতে না নেওয়ার ছবি আরও এক বার মনে করিয়ে দিলেন তৃণমূল সাংসদ। ‘‘বাড়ির ছেলেকে দেশপ্রেম শেখাতে পারে না! তার খালি একটাই কাজ, ঘোড়ার মতো বিধায়ক কেনাবেচা করে সরকার পাল্টানো!’’, বলেন অভিষেক। প্রসঙ্গত, শুক্রবার কয়লা পাচার মামলায় তদন্তের জন্য অভিষেককে ডেকে পাঠিয়েছিল ইডি। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ঢুকে ঘণ্টা সাতেক পর, সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার কিছুক্ষণ পর হেঁটে সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরোন অভিষেক। তারপর আত্মবিশ্বাসের সুর ধরা পড়ল ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের গলায়। বললেন, তিনি ইডিকে লিখিত বয়ান দিয়েছেন। টানা প্রায় ৪০ মিনিট ধরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন অভিষেক।
এদিন তৃণমূল সাংসদ সরাসরিই বলেন, ইডির সমন তিনি পেয়েছেন বৃহস্পতিবার। ক্যুরিয়রে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অথচ মঙ্গলবার থেকে সংবাদমাধ্যমে বলা শুরু হয়েছে, আমায় ইডি ডেকে পাঠিয়েছে!’’ অভিষেকের কথায়, ‘‘আমায় যত বার ইডি ডেকে পাঠিয়েছে, আমি সহযোগিতা করেছি। আগেও দু’বার তদন্তের সম্মুখীন হয়েছি। এবার আদালতের রায়ের জন্য দিল্লিতে না-ডেকে কলকাতায় ডেকে পাঠিয়েছে। আমি তাতেও তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করলাম।’’ এরই পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘দিল্লী থেকে লোক এসেছে কলকাতায় জেরা করতে। এটাই তো নৈতিক জয়!’’ অভিষেক আরও বলেন, ‘‘আমার স্ত্রীকে এক বার সিবিআই, এক বার ইডি ডেকেছে। আমাকে তিন বার। কিন্তু ফলাফল শূন্য! আমায় যত বার ডাকবে, আমি ‘আউট অব দ্য ওয়ে’ গিয়ে সহযোগিতা করতে তৈরি। আমি তিন বার গিয়েছি। প্রয়োজনে আরও ৩০ বার যাব। কিন্তু আমি মাথা নত করার ছেলে নই। মাথা নত করতে হলে সাধারণ মানুষের কাছে করব। দিল্লীতে বসে-থাকা জল্লাদদের কাছে নয়। যাঁরা তদন্তকারী, তাঁদের কাউকে কোনও দোষারোপ করছি না। তাঁরা চাকরি করেন। তাঁরা চাপে রয়েছেন। কিন্তু যাঁরা ক্যামেরার সামনে দু’কান কাটার মতো হাত বাড়িয়ে টাকা নিয়েছে, তাদের কেন ডাকা হচ্ছে না?’’
উল্লেখ্য, বিজেপি নেতারা কংগ্রেস সাংসদ রাহুলকে প্রায়শই ‘পাপ্পু’ নামে কটাক্ষ করে থাকেন। সেই শব্দবন্ধকে ব্যবহার করেন অভিষেক বলেন, ‘‘অন্য এক রাজনৈতিক দলের নেতাকে পাপ্পু বলে কটাক্ষ করে বিজেপি। আমি বলছি, সবচেয়ে বড় পাপ্পু তো অমিত শাহই।’’ পাশাপাশি অভিষেক দাবি করেন, কয়লা পাচারের টাকা ঢুকেছে অমিতের পকেটে। তাঁর কথায়, ‘‘গরু পাচার হয় কী করে? বর্ডারের দায়িত্বে কে? এই টাকা তো সরাসরি অমিত শাহের কাছে গিয়েছে! সরাসরি বিজেপি নেতাদের কাছে গিয়েছে। এটা গরু বা কয়লা কেলেঙ্কারি নয়। এটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেলেঙ্কারি!’’ অভিষেকের দাবি, ইডি-সিবিআইকে দিয়ে তৃণমূলকে দাবিয়ে রাখার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। কারণ, রাজনৈতিক ভাবে তারা তৃণমূলের সঙ্গে লড়তে পারছে না। ‘‘ওরা পলিটিক্যালি লড়তে পারছে না বলেই ইডির জুজু দেখাচ্ছে। কিন্তু ভুল করছে। দিল্লির জল্লাদদের কাছে মাথা নত করব না। যত বার ডাকবেন, তৃণমূলের প্রত্যয় তত দৃঢ় হবে’’, বলেন তিনি। এ দিন বিজেপির জাতীয়তাবাদ নিয়েও পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় হেঁটেছেন অভিষেক। বলেন, বাংলার জন্যই ঝাড়খণ্ডে সরকার ফেলতে পারেনি বিজেপি। গোয়া বা মহারাষ্ট্রে তৃণমূলের সরকার থাকলে বিজেপির পক্ষে তা ভেঙে দেওয়া সম্ভব হত না, এও মনে করিয়ে দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।