আজ সন্ধ্যেয় রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের ভারত যে প্লেয়ারদের বিরুদ্ধে খেলতে নামবে, তাঁদের পেশা কী জানেন? ক্রিকেটবিশ্বে হংকং এখনও শৈশব পেরোয়নি। ধীরে ধীরে সাবালক হওয়ার পথে এগোচ্ছে তারা। সেই দেশের অধিকাংশ ক্রিকেটারের উপার্জন ক্রিকেট থেকে নয়। বরং, অন্য জীবিকা নির্বাহ করেই ক্রিকেট খেলে চলেছেন। হংকংয়ের টিমে রয়েছে ১৭ জন ক্রিকেটার। ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন একজন, হিরে ব্যবসায়ীর ছেলে একজন, কিছু কাজ করেন অফিসকাছারিতে। আর অধিকাংশ ক্রিকেটার ডেলিভারি বয়। বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়া যাঁদের কাজ। এই একঝাঁক ছেলেই ভারতের চিন্তা হয়ে উঠতে পারে এশিয়া কাপের ম্যাচে। ব্যাট-বল হাতে যে ক্রিকেটাররা ২২ গজে দাপট দেখান, তাঁরাই আবার সাইকেল-বাইকে বাড়ি বাড়ি ঘুরে খাবার ডেলিভারি করেন! শুনে চমকে ওঠার কথা। হঠাৎ করে যদি জানতে পারেন কোনও ক্রিকেটার, ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি কোনও ফুড ডেলিভারি সংস্থায় কাজ করেন, তা হলে যে কেউ অবাক হবেনই। হংকং এ বারের এশিয়া কাপের যোগ্যতা অর্জন করেছে। রোহিত শর্মার ভারতের বিরুদ্ধে নামার আগে নিজাকত খানের দলের কোচ ফাঁস করলেন এক অবাক করা তথ্য। জনপ্রিয় এক ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনই বলেছেন হংকংয়ের কোচ ট্রেন্ট জনস্টন। ক্রিকেটের জন্য দীর্ঘদিন বাড়ি-ঘর ছাড়া হংকংয়ের ক্রিকেটাররা। এশিয়া কাপে আজ, বুধবার ভারতের বিরুদ্ধে নামবে হংকং। গত তিন মাস ধরে হংকংয়ের ক্রিকেটাররা নামিবিয়া, উগান্ডা, জার্সি, ওমান ও জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে পর পর খেলে গিয়েছেন। ছয় নম্বর দল হিসেবে এশিয়া কাপের যোগ্যতা অর্জন করার লড়াইয়ে হংকংয়ের সঙ্গে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কুয়েত ও সিঙ্গাপুর। আমিরশাহিকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ‘এ’ গ্রুপে জায়গা করে নিয়েছে হংকং। সেখানে হংকং ভারত ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলবে।
হংকংয়ের ক্রিকেটাররা জানেন, যে তাঁরা এই টুর্নামেন্টে শেষ অবধি যেতে পারবে না। আর্থিক দিক থেকেও তাঁরা খুব যে লাভবান হবেন এই টুর্নামেন্ট থেকে তাও বলা যায় না। তা সত্ত্বেও তাঁরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞা নিয়েই বিরাটদের বিরুদ্ধে মাঠে নামার জন্য তৈরি। প্রশ্ন হল, যে ডেলিভারি বয়রা বেশ কয়েকমাস হংকংয়ের হয়ে খেলতে ব্যস্ত, তাঁদের দিনগুজরান হচ্ছে কীভাবে? দেশের হয়ে খেলার জন্য তাঁদের ক্রিকেট বোর্ড পাশে রয়েছে। হংকং অবশ্য ধনী ক্রিকেট বোর্ড নয়। যে কারণে টুর্নামেন্ট থাকলে তবেই ক্রিকেটারদের দৈনিক ভাতা দেওয়া হয়। ক্রিকেটের বাইরের জীবন কাটাতেই ডেলিভারি বয়ের কাজ করতে হয় হংকংয়ের প্লেয়ারদের। হংকংয়ের কোচ জনস্টন বলেন, “হংকংয়ে প্রায় ছ’বার লকডাউন হয়েছে। আমরা গত এক বছর ধরে অনুশীলন করতে পারিনি। নিজেদের বাড়ি, পার্ক এবং কার পার্কিং থেকে জুম কলের মাধ্যমে ছেলেরা স্ট্রেন্থ অ্যান্ড কন্ডিশনিং সেশন করেছে। ওরা যে দায়বদ্ধতা দেখিয়েছে, তা অসাধারণ। ওরা কখনও কোনও বিষয়ে অভিযোগ করেনি।” একইসঙ্গে জনস্টন বলেন, “দলের অনেক ছেলেই ফুড পান্ডা কিংবা ডেলিভারের ডেলিভারি ড্রাইভারের কাজ করে। আমাদের সহ-অধিনায়ক কিঞ্চিত শাহর জুয়েলারি ব্যবসা রয়েছে। স্কট ম্যাককেনির নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে। দলের তরুণ বোলার আয়ুষ শুক্লা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। কেউ কেউ আবার অফিস-টফিসে কাজ করে।” দলের প্রত্যেক প্লেয়ারের প্রশংসা করে জনস্টন বলেন, “ওরা সবাই গত তিন মাস ক্রিকেট খেলার জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করেছে। ওদের পরিবারের সকলকে ধন্যবাদ জানাব। স্ত্রী, বান্ধবী ও বাচ্চারা ওদের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। ওরা কিন্তু বাড়ি ফেরার কথা একবারও বলেনি।”