এবার বিচারব্যবস্থা নিয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, বিচারপ্রক্রিয়া সব সময় নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। মানুষ যখন আর কোথাও আশ্রয় খুঁজে পান না, তখনই তাঁরা বিচারব্যবস্থার শরণাপন্ন হন। মমতার কথায়, ‘‘বিচার নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। একপক্ষ নয়।’’ ইতিমধ্যেই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে মমতার সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ইডি গ্রেফতার করেছে। প্রাথমিকের স্কুল শিক্ষক নিয়োগের মামলায় বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে সিবিআই জারি করেছে ‘লুক আউট নোটিস’। পাশাপাশিই, শাসক দলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডলকেও গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার করেছে সিবিআই। আপাতত তিনি জেল হেফাজতে। ফলে অনেকেই মনে করছেন, মমতার ওই মন্তব্য সেই প্রেক্ষিতে হলেও হয়ে থাকতে পারে। পাশাপাশিই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বিচারব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার কথাই বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিচারব্যবস্থা গণতন্ত্রের স্তম্ভ। তাই বিচার কখনও একপক্ষ নয়, নিরপেক্ষ হওয়া উচিত।’’ তবে ওই একই মঞ্চ থেকে মমতা সংবাদমাধ্যমের একাংশেরও সমালোচনা করেছেন। মিডিয়া ট্রায়াল বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টের একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মমতা। নব মহাকরণে এ বার থেকে কলকাতা হাই কোর্টের কাজকর্ম হবে। সেই ‘অনুমতিপত্র’ দেওয়ার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ হচ্ছে। এটা কাম্য নয়। প্রমাণ দেখে তবেই কথা বলা উচিত। কিন্তু তা হচ্ছে না।’’ বিচারপতিরা যেন ‘মিডিয়া ট্রায়াল’-এ প্রভাবিত না হন, সেই অনুরোধও করেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে পেশাগত দায়িত্ব পালনে হাজির ছিলেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও। তাঁদের উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘নো মিডিয়া ট্রায়াল নাউ! গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিচারব্যবস্থা এবং সংবাদমাধ্যম হল মূল স্তম্ভ। এর মধ্যে একটির বিশ্বস্ততা নষ্ট হলে বাকিদেরও বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।’’ প্রসঙ্গত, কাজের সুবিধার জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই নতুন একটি ভবনের দরকার ছিল কলকাতা হাই কোর্টের। বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে আদালতের কাজের জন্য নব মহাকরণের ‘বি’ ব্লকের ন’তলা ভবনটি ব্যবহারের অনুমতিপত্র তুলে দেওয়া হয় হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির হাতে। সেই অনুষ্ঠানেই বিচারব্যবস্থা নিয়ে বক্তব্য পেশ করার পাশাপাশিই মমতা বিচারপতিদের অনুরোধ করেন যাতে জমে-থাকা মামলার দ্রুত সুরাহা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘আগে ৮৮টা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট ছিল। সেগুলো বন্ধ করার কথা উঠেছিল। আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা (ভট্টাচার্য) সে কথা বলেছিল আমায়। আমি ওই কোর্ট বন্ধ হতে দিইনি।’’ প্রধান বিচারপতিকে মমতা আবেদন জানান, আরও বেশি মহিলা বিচারপতি নিয়োগের জন্য। ‘‘আমি নিজেও এক জন আইনজীবী। আইনজীবীদের সংগঠনের প্রতি মাসের চাঁদা এখনও দিই। আগে মামলা লড়েছি আইনজীবী হিসেবে। চাইলে আবার কোর্টে মামলা লড়তে আসতে পারি’’, জানান মুখ্যমন্ত্রী।