উনিশে এসেছিল বড় জয়। বাংলারবুকে ১৮টি লোকসভা কেন্দ্রে ফুটেছিল পদ্মফুল। তার জেরেই বঙ্গ বিজেপির নেতারা উদ্বাহু হয়ে হাঁক পাড়তে শুরু করেছিলেন যে, ‘একুশেই ডুববে দিদির গদি’। কার্যত সেই হাঁকডাকে ভরসা রেখেছিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতারাও। আর তাই দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় বাহিনী, কেন্দ্রীয় এজেন্সি সব কিছু নিয়ে গেরুয়া শিবির রে রে করে মাঠে নেমে পড়েছিল বাংলা দখল করতে। শ্লোগান উঠেছিল, ‘আবকে বার ২০০ পার’।
কিন্তু ২০০ তো বহু দূর, তার অর্ধেক ১০০ আসনও জুটল না বিজেপির ভাগ্যে। মাত্র ৭৭ আসন পেয়েই বিজেপি হত ইতি গজ। এখন পার্থ-কেষ্ট কাণ্ডে তৃণমূল বেশ অস্বস্তিতে এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই। দলের এই দুই মহারথীর রাজনৈতিক জীবনেই যে একটা দাঁড়ি পড়ে গেল এনিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তাতে বিজেপির কী লাভ হল? প্রশ্ন ঘুরছে খোদ সঙ্ঘে। প্রশ্ন ঘুরছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরেও। আর এখানেই সঙ্ঘের কর্তারা মানছেন যতক্ষন না বাংলায় মমতার বিকল্প মুখ তুলে ধরা না হবে ততদিন রাজনৈতিক ভাবে বিজেপি সাফল্য পাবে না বাংলার বুকে।
স্কুল সার্ভিস কাণ্ডে সিবিআই তদন্তে এসএসসি কর্তারা বিপাকে পড়েছিলেন। কিন্তু পার্থ’র গায়ে তখনও আঁচ পড়েনি। আঁচ পড়ল ইডি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করার পরে। রাজ্যের মন্ত্রী থাকাকালীন অবস্থাতেই ইডির হাতে গ্রেফতার হলেন পার্থ। তা দেখে বাম – বিজেপির নেতারা বাংলাজুড়ে বেশ লম্ফঝম্ফ করে বেড়ালেন। গতকাল অনুব্রত মণ্ডল গিয়েছেন সিবিআইয়ের হেফাজতে। তার জেরে জেলায় জেলায় সেই বাম আর বিজেপি গুড় বাতাসা আর নকুলদানা বিলি করেছে। কোথাও কোথা গরুসেবাও করা হয়েছে। কিন্তু এই সব করে আখেরে লাভ কী হচ্ছে? বাংলার মানুষ কী বাম আর বিজেপিকে আগামী নির্বাচনে ভোট দেবেন? বাংলায় কী আবারও পরিবর্তন ঘটবে? বিজেপি বা বামেদের রাজ্য বিধানসভার পাশাপাশি লোকসভা কেন্দ্রে, জেলা পরিষদে, পঞ্চায়েত সমিতিতে, গ্রাম পঞ্চায়েতে, পুরসভা বা পুরনিগমে আসন বাড়বে? আর এখানেই সন্দিহান খোদ সঙ্ঘ কর্তারা। মানে আরএসএস নেতারা। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরা মেনে নিচ্ছেন, বাংলায় মমতার বিকল্প মুখ যতক্ষন না উঠে আসবে ততক্ষন নতুন করে পরিবর্তন কার্যত অসম্ভব। তা সে মোদী নিজেও এলেও যে পরিবর্তন ঘটবে না সেটা একুশের নির্বাচন দেখিয়ে দিয়েছে।