বর্তমানে চিকিৎসা শাস্ত্রের অগ্রগতির কথা কারুর অজানা নয়। বহু কঠিন রোগ সারিয়ে তুলছেন ডাক্তাররা। আবারও তেমনই আরেক দৃষ্টান্ত রাখল সরকারি হাসপাতা। মাত্র সাত মাসে ভূমিষ্ঠ হয় ৭০০ গ্রামের এক শিশু। এত প্রি-ম্যাচিওর্ড শিশুকে বাঁচানো কার্যত অসম্ভব ঠাওরেছিলেন সকলে। কিন্তু অসম্ভবকেই সম্ভব করলেন মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকরা। দু’মাস ধরে নজরদারিতে রাখার পরে অবশেষে সুস্থ হয়েছে শিশু। বৃহস্পতিবার দুপুরে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে সন্তানকে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি নিয়ে যেতে পেরে উচ্ছ্বসিত মা-সহ গোটা পরিবার, হাসপাতালের চিকিৎসকরাও। জানা গিয়েছে, মাস দুয়েক আগে সূতির বাসিন্দা আলিয়ারা খাতুন জঙ্গিপুর হাসপাতালে ভর্তি হন লেবার পেন নিয়ে। ১৬ জুন নর্মাল ডেলিভারিতেই এক সন্তান প্রসব করেন তিনি। গর্ভাবস্থার মাত্র সাত মাসে জন্মানো অপুষ্ট শিশুটির ওজন ছিল মাত্র ৭০০ গ্রাম। তার শরীরে রক্ত ও হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ অত্যন্ত কম ছিল। শ্বাস নিতেও পারছিল না সে ঠিক করে। চিকিৎসকরা বিশেষ নজরদারিতে রাখেন তাকে। ধীরে ধীরে সে সুস্থ হয়ে ওঠে প্রায় মিরাকেল ঘটিয়ে। একটু একটু করে ওজনও বৃদ্ধি পায় তার। দু’মাসে প্রায় দেড় কেজি ওজন বাড়িয়ে তাকে গতকাল ছাড়া হয় হাসপাতাল থেকে।
জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের এসএনসিইউ বিভাগের চিকিৎসক অরুণ শতপথী জানিয়েছেন, এত কম ওজনের সদ্যোজাতকে আগে বাঁচানো যায়নি। হাসপাতালের সুপার অবিনাশ কুমার বলেন, ‘শিশুটি অপুষ্ট ও কিছু জটিল অসুখ নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়। চিকিৎসকদের ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে শিশুটি সুস্থ হয়ে ওঠে। এজন্য আমরা খুশি ও আমাদের টিমের বড় সাফল্যে গর্বিত।’ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটির চিকিৎসায় ‘কেএমসি মেথড’ অর্থাৎ ক্যাঙারু পদ্ধতি ফলো করেছিলেন তাঁরা। অর্থাৎ দিনে প্রায় ছ’ঘণ্টা ক্যাঙারুর থলিতে বাচ্চা নেওয়ার মতো করে শিশুটিকে তার মায়ের বুকের সঙ্গে রাখা হতো, যাতে শিশুর দেহের তাপমাত্রা ঠিক থাকে এবং মায়ের সঙ্গে শিশুর একটা যোগাযোগও তৈরি হয়। এতেই ফল মেলে। সকলকে অবাক করে দিয়ে ধীরে ধীরে সেরে ওঠে বাচ্চাটি। নতুন মা আলিয়ারা খাতুন বলেন, এটিই তাঁর প্রথম সন্তান। সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হওয়ায় ওজন খুব কম ছিল, ছিল অনেক জটিলতা। সবাই বলেছিল, বাঁচবে না। কিন্তু ডাক্তারের নির্দেশ মতোই সবকিছু মেনে চলেন তিনি। শেষমেশ সন্তানকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যেতে পেরে আনন্দিত তিনি।