রাজ্য মন্ত্রিসভায় জায়গা দেওয়া হল ৮ নতুন মুখকে। বুধবার রাজভবনে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন বাবুল সুপ্রিয়-সহ ৮ জন নতুন মুখ। এদিন বিকেল ৪টে থেকে অস্থায়ী রাজ্যপাল লা গণেশন নতুন মন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করানো শুরু করেন। এই রদবদলে নতুন মন্ত্রী হলেন অনেকে। তাঁরা হলেন –
বামফ্রন্ট আমলে কৃষিমন্ত্রী কমল গুহর ছেলে উদয়ন গুহ। বাবার হাত ধরেই রাজনীতিতে এসেছিলেন। ২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ফরোয়ার্ড ব্লকের হয়ে দিনহাটায় প্রথম প্রার্থী হন উদয়ন।
উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধি হিসাবে রাজ্যের মন্ত্রিসভায় এলেন তাজমুল হোসেন। উত্তরবঙ্গের এই নেতা ফরোয়ার্ড ব্লকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ ছিলেন। ২০১১ সালে ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী হিসাবে জিতে প্রথম বার বিধায়ক হন তাজমুল।
মন্ত্রিসভায় বাবুলের জায়গা পাওয়া প্রত্যাশিতই ছিল। ২০১৪ সালে আচমকাই উল্কার মতো রাজ্য রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করেন বাবুল। বাবা রামদেবের সুপারিশে আসানসোল কেন্দ্রে বিজেপির টিকিট পান তিনি। প্রথম বারেই তৃণমূলের প্রার্থী দোলা সেনকে পরাজিত করে সাংসদ হন।
স্নেহাশিস হুগলি জেলার রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। তৃণমূলের মুখপাত্র হিসাবে তাঁকে প্রায়শই বিভিন্ন চ্যানেলের বিতর্কে তাঁকে দেখা যায়। মদন মিত্র যুব কংগ্রেসের সভাপতি থাকাকালীন স্নেহাশিসকে হুগলি জেলার যুব তৃণমূলের সভাপতি করেছিলেন। সেখান থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি স্নেহাশিসকে। ২০১১ সালে প্রথমবার জাঙ্গিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। জিতওছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনে ওই একই কেন্দ্রে পর পর তিন বার জিতে স্নেহাশিস নিজের উপর দলের আস্থা বাড়িয়েছেন।
তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার রাজনীতিতে মুকুল রায়ের ‘অতি-ঘনিষ্ঠ’ নেতা হিসাবে পরিচিত তৃণমূল নেতা পার্থ ভৌমিক। এক সময়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতিও হন পার্থ। পরে ২০১১ সালে নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতে প্রথম বারের জন্য বিধায়ক হন। পার্থ সুবক্তা, ঠান্ডা মাথার রাজনীাতিক বলেই পরিচিত। তিনি পরিচিত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন বলেও।
রদবদলের পর বাংলার মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি দফতরের প্রধান উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। ভোটের রাজনীতিতে প্রথম দিকে দেখা না গেলেও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রদীপকে দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের প্রার্থী করেন দলনেত্রী মমতা।
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে আবার ওই একই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়। তবে এ বার আর নিরাশ হননি প্রদীপ। ভোটে জেতার পর দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক হন। মন্ত্রী যে-ই হোন না কেন, প্রদীপের পরামর্শ মেনেই রাজ্যের কৃষি দফতরের যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আদি তৃণমূলের ‘অন্যতম যোদ্ধা’ হিসাবে পরিচিত বিপ্লব রায়চৌধুরী তাঁর পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির জন্য দলের অন্দরে খ্যাত। ষাটের দশকের শেষে মেদিনীপুর জেলা থেকে বিপ্লবের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। ১৯৬৮-’৬৯ নাগাদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির হাত ধরে ছাত্র পরিষদের সদস্য হন এই বর্ষীয়ান নেতা। বহুবার বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েও তিনি অনেকদিন পর্যন্ত জয়ের মুখ দেখেননি।
১৯৯৬ সালে কোলাঘাট কেন্দ্র থেকে প্রথমবার কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন বিপ্লব। এখনও পর্যন্ত চার বারের বিধায়ক বিপ্লব ১৯৯৮ সালে তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিচার করে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন। ২০০১ সালেও ভোটে জিতে বিধায়ক হন তিনি। কিন্তু হেরে যান ২০০৬ সালে। তবে ২০১১ সালে বিধানসভায় প্রত্যাবর্তন হয় বিপ্লবের। কিন্তু ২০১৬ সালে পাঁশকুড়া পূর্ব কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়ে আবার পরাজিত হন তিনি। জিতে ফেরেন ২০২১ সালে। চতুর্থ বারের জন্য বিধায়ক নির্বাচিত বিপ্লব পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রাজনীতিতে বরাবর অধিকারী পরিবারের ‘বিরোধী’ হিসাবেই বিপ্লব পরিচিত।
চল্লিশের কোঠা পার করা তৃণমূল নেতা সত্যজিৎ বর্মণের বাংলার রাজনীতিতে আগমন ২০০১ সালে। প্রথম জীবনে কংগ্রেসের সদস্য হলেও ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের পর তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রায়গঞ্জ ২ নম্বর ব্লক থেকে জিতে উত্তর কর্মাধ্যক্ষ হন বিশ্বজিৎ।
বর্তমানে রায়গঞ্জ ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমলের চেয়ারম্যান সত্যজিৎ ২০২১ সালে হেমতাবাদ কেন্দ্র থেকে জিতে প্রথম বার বিধায়ক হন। নতুন দায়িত্বের জল্পনা নিয়ে তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘দিদি যদি আমাকে বুথ সভাপতি হয়ে থাকতে বলেন, তা হলে আমি বুথ সভাপতি হয়েই থাকব। দিদি যা আদেশ দেবেন, সেটাই আমার জন্য শেষ কথা।’’