গত কয়েক মাস ধরে জ্বালানির আকাল এবং তীব্র খাদ্য সংকটের জেরে শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে। যার ফলে শ্রীলঙ্কাবাসীর ক্ষোভ আছড়ে পড়ে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ে রাজাপক্ষের দুয়ারে। ইস্তফা দিতে বাধ্য হন তিনি। রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে দ্বীপরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেও নৈরাজ্যের পরিস্থিতি অব্যাহত। এবার শ্রীলঙ্কার মতো উত্তাল হয়ে উঠেছে ইরাক-ও। সেখানে বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবন দখল করে নেয়। বিক্ষোভ মোকাবিলায় নিরাপত্তা রক্ষীরা তেমন একটা চেষ্টা করেনি। ফলে এখনও পর্যন্ত রক্তপাত আটকানো গিয়েছে। ভবনের বাইরে বিস্তীর্ণ গ্রিন জোন এখন বিক্ষোভকারীদের দখলে। গ্রিন জোনে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন, বিদেশি মিশন, সেনা সদর ইত্যাদি। সেখানে রাস্তার বিক্ষোভকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আন্দোলনের চরিত্র শ্রীলঙ্কার মতো হলেও ইরাকের ইস্যু আলাদা। সে দেশের গত বছর অক্টোবর থেকে সরকার গঠন নিয়ে অচলাবস্থা চলছে। সদ্য সরকার গঠনের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। তারমধ্যেই বিরোধ বেঁধেছে দুটি কারণে। ইরাকি সংসদের ৩২৯টি আসনের মধ্যে ৭৩টি’র দখল নিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হয় আল সদর ব্লক। কিন্তু তাদের সরকার গড়তে দেওয়া হয়নি। সেই থেকে দফায় দফায় আলোচনা চলে আসছিল। হঠাৎ করেই পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয় আল সদর আলোচনা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ায়। অন্য একটি গোষ্ঠীর পক্ষে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী এবং একটি প্রদেশের একদা গভর্নর মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি। বিক্ষোভকারীরা তাঁকে মানতে নারাজ। তাঁর বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ তিনি ইরানের বন্ধু।
আন্দোলনকারীদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী করতে হবে শিয়া নেতা তথা আল সদরের পদাধিকারী মুক্তাদা আল সদর’কে। তাঁর ছবি বুকে ঝুলিয়ে বিক্ষোভকারীরা বাগদাদের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার দখল নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে মানুষ গাড়িতে, হেঁটে বাগদাদ অভিযান শুরু করেছেন, ঠিক দিন পনেরো আগে যেভাবে শ্রীলঙ্কার মানুষ কলম্বো অভিযান করেছিল। একেবারে কলম্বোর বিক্ষোভকারীদের ধাঁচে সংসদ ভবনে ঢুকে নাচ-গান করছে বিক্ষোভকারীরা। ছবিতে দেখা গিয়েছে, একজন বিক্ষোভকারী স্পিকারের টেবিলে শুয়ে আছেন। প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল-কাদিমি বিক্ষোভকারীদের সংসদ ভবন এবং গ্রিন জোন ছেড়ে যাওয়ার আর্জি জানিয়ে বলেছেন, শান্তি বজায় রাখুন। তা না হলে বলপ্রয়োগ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পর কিছু বিক্ষোভকারী সংসদ ভবন ছেড়ে গিয়েছেন। কিন্তু রাস্তা এখনও তাদের দখলে। তাদের মুখে একটাই স্লোগান, আল-সুদানি গো ব্যাক।