শনিবার সাতসকালেই রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট(ইডি)। তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি এখনও। তাই অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে যে ২১ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছে, তার সঙ্গে পার্থর যোগাযোগ প্রমাণ সাপেক্ষ। তবে এত বড় ঘটনার পরেও রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তাপ নেই বললেই চলে। কংগ্রেস ও সিপিএম ক্ষয়িষ্ণু। প্রধান বিরোধী দল বিজেপিও মেতে রয়েছে নেট মাধ্যমের প্রচারে। ফেসবুক, টুইটারে নেতারা সরব হলেও আন্দোলনের পথ থেকে দূরত্ব অনেক। এমন সমালোচনা বিজেপির অন্দরেই। আদি নেতাদের কেউ কেউ এমন সমালোচনাও করছেন যে, বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে রাজনীতি বোঝা লোকের অভাবই কাল হয়েছে।
অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বাংলায় বিজেপি ‘অন্যরকম’ বলেও খোঁচা দেওয়া চলছে দলের ভিতরে। এক নেতার কথায়, ‘এত বড় ইস্যু অতীতে আসেনি। আগামীতে আসবে কি না জানা নেই। কিন্তু তার জন্য দলের যা করা উচিত, তার উদ্যোগই দেখা যাচ্ছে না। রুটিন কর্মসূচি নিয়েই ব্যস্ত নেতারা। এমন হাতেগরম ইস্যু পেয়ে গেলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে যে আন্দোলনে নামতে হবে সেটা ভাবার লোকই নেই নেতৃত্বে।’ শনিবার থেকে কলকাতাতেই রয়েছেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তাঁদেরও কাজে লাগানো যেতে পারত বলে অনেকে মনে করছেন। তবে কেউ কেউ বলছেন, ইচ্ছা করেই বেশি সক্রিয় নয় দল। কারণ, তাতে দলের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সি ব্যবহারের অভিযোগ বাড়াতে পারে তৃণমূল।
রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব যে একেবারে কিছু করেনি তা অবশ্য নয়। তবে তার বেশিটাই হয়েছে ফেসবুক বা টুইটারে। পার্থর বাড়িতে ইডি আধিকারিকরা যাওয়ার পরেও চুপ ছিলেন নেতারা। কিন্তু যেই মুহূর্তে ইডি জানায় অর্পিতা মুখোপাধ্যায় পার্থর ঘনিষ্ঠ, তার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় ‘মিম’ বানানো। নেট মাধ্যমের উপরে নির্ভরতার জন্য সিপিএমের সমালোচনা করা বিজেপি ‘মিম’ বানানোয় মেতে ওঠে। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের টুইটারে পার্থর থেকে অর্পিতার উল্লেখ বেশি দেখা যায়। তার ব্যতিক্রম দেখা যায়নি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ক্ষেত্রেও। আর বিজেপির ‘আইটি সেল’ উঠেপড়ে লাগে পার্থকে নিয়ে নানারকম ‘মিম’ ছড়িয়ে দিতে।
শনিবার অবশ্য কলকাতায় গাঁধী মূর্তির পাদদেশে যান সুকান্ত। সেখানে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলছে চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ আন্দোলন। শনিবার সুকান্ত যাওয়ার আগে অবশ্য ওই মঞ্চে দেখা যায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীকেও। সুকান্ত ওই মঞ্চে গিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান। বিজেপি ক্ষমতায় এলে সকলকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু কলকাতায় বড় রকমের কোনও কর্মসূচি নিতে দেখা যায়নি গেরুয়া শিবিরকে। বরং, রাজ্য নেতারা ব্যস্ত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে রুটিন সাংগঠনিক বৈঠকে। যা দেখে দলেই অনেকে বলছেন, সময় নষ্ট করে ঠিক করছে না বিজেপি। এক নেতা বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমাদের অনেক কিছুই শেখার বাকি রয়ে গিয়েছে। এই ধরণের কিছু ঘটলে বিরোধী নেত্রী হিসাবে মমতা কী কী করতেন সেটা ভাবা উচিত। সেই ভাবে আন্দোলনে না ঝাঁপালে এতবড় ইস্যু হাতছাড়া হয়ে যাবে।’