আয় বহির্ভূত সম্পত্তির জেরে ফের গ্রেফতার অধিকারী পরিবারের ঘনিষ্ঠ কাঁথি পুরসভার সহকারি ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ বেরা। গত ৩০ দিনের মধ্যে পরপর দু’বার গ্রেফতার হলেন কাঁথি পুরসভার সহকারী ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ বেরা। এবার আয় বহির্ভূত সম্পত্তি রাখার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এদিন ধৃতকে কাঁথি আদালতে তোলা হলে বিচারক জামিন নাকচ করে ১২ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিশেষ আদালতের বিচারক তথা অতিরিক্ত দায়রা জেলা আদালতের বিচারক (তূতীয়) সুপর্ণা রায়৷ বস্তুত, এর আগে শ্মশান দুর্নীতি কাণ্ডে তাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ৷ তার পর থেকেই পুরসভা থেকে সাসপেন্ড এই ইঞ্জিনিয়র৷
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, দিলীপ বেরার সম্পত্তির পরিমাণ ৩ কোটি ১৯ লক্ষ ৫২ হাজার ৯৪৭ টাকা। তিনি ১৯৯৭ সালে অধিকারী আমলেই কাঁথি পুরসভার কাজে যোগ দেন। পুলিশের এক কর্তা বলেন, পুলিশ হেফাজতে থাকা সহকারী ইঞ্জিনিয়ারের ৩০ এপ্রিল ২০২২ সাল পর্যন্ত বেতন বাবদ একাউন্টে ঢুকেছে ৮৯ লক্ষ ৯৫ হাজার ৮৬৯ টাকা। তার পরেও কি করে নিজের ও স্ত্রীর নামে কি করে বিপুল সম্পত্তি বানালেন তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ৷
বস্তুত, ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্ষন্ত কাঁথি পুরপ্রধান ছিলেন বর্তমান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বাবা শিশির অধিকারী৷ পরবর্তীকালে পুরপ্রধান হন বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্ষন্ত তিনি ওই দায়িত্বে ছিলেন৷ ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কাঁথি পুরসভা পুরপ্রধান হন শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু অধিকারী। এরপর রাজ্য সরকার প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করে সৌমেন্দু অধিকারীকে। দীর্ঘ দশ বছরের বেশি সময় ধরে কাঁথি পুরসভার পুরপ্রধান ছিলেন। তারমাঝে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত সাহার হাত ধরে শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেন। রাজ্য সরকার কাঁথি পুরসভার প্রশাসক সৌমেন্দু অধিকারীকে সরিয়ে দেয়। নতুন করে প্রশাসক নিযুক্ত করে। তারপরে দাদার পথেই বিজেপিতে যোগ দেন সৌমেন্দু অধিকারী।
দুর্নীতির তদন্তে নেমে কাঁথি থানার তদন্তকারীরা ও জেলা পুলিশের আধিকারিকরা সহকারী ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ বেরার সম্পত্তি দেখে চমকে উঠেন৷ বিমা, ফিক্সড ডিপোজিট বাবদ ওই ইঞ্জিনিয়ার স্ত্রীর নামে প্রায় দু’কোটি টাকা রয়েছে। ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে জমি কিনেছেন । গাড়ি, সোনা ব্যয় করেছেন আরও ৮ লক্ষ টাকা। শুধুমাত্র কাঁথি সেন্টাল বাসস্ট্যাণ্ড জনমঙ্গল সমিতিতে রয়েছেন ১ কোটি ২৭ লক্ষ ১৩ হাজার ৭১৭ টাকা। স্ত্রীর নামে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিট পরিমাণ ১৭ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। এছাড়াও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নিজের ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে ১৫ লক্ষ টাকা। এছাড়াও একাধিক বিমার সংস্থার কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা রেখেছে৷ এই টাকার উৎস্য জানতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ৷ কাঁথি মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সোমনাথ সাহা বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্তের কারণে অভিযুক্তকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে’। তবে এই বিষয়ে সহকারি ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ বেরা ও তার পরিবারের কোনও সদস্যের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।