বিগত দু’বছর করোনা মহামারীর জেরে ভার্চুয়ালি শহিদ দিবস পালন করেছিল তৃণমূল। ফলে ধর্মতলায় তৃণমূলের শহিদ সমাবেশের বিপুল জনসমাগম দেখা যায়নি। কিন্তু চলতি বছরে সংক্রমণ আয়ত্তে থাকায় আগের মতোই ফের বিশাল জনসমাগমের সঙ্গে শহিদ দিবস পালন করেছে ঘাসফুল শিবির। আর আজ আজ সেই সমাবেশের আগে একুশে জুলাই উপলক্ষ্যে তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’য় কলম ধরেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে একদিকে যেমন শহিদ দিবসের তাৎপর্যের কথা বলেছেন তিনি। পাশাপাশি ‘জাগো বাংলা’র দৈনিক সংস্করণের প্রথম বর্ষপূর্তির কথা বিশ্লেষণ করেছেন।
অভিষেক লিখেছেন, একুশে জুলাই বাংলার ক্যালেন্ডারে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন। ঊনিশশো তিরানব্বইয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর বামজমানার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, গণহত্যা, জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হত্যার চেষ্টা, তেরোজন নিরাপরাধ রাজনৈতিক কর্মীকে সংগঠিতভাবে হত্যা, শতাধিক প্রতিবাদীকে জখম করা এক কলঙ্কিত দিন। তারপর থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিকরা এবং বাংলার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সচেতন নাগরিক প্রতিবছর এই দিনটিকে পালন করেন।
এই দিনটি পালনের একাধিক তাৎপর্য রয়েছে। প্রথমত, কী প্রবল অত্যাচার, অবিচারের ভয়ঙ্কর দিনগুলি পার করে বাংলায় নতুন সূর্যোদয় আনতে হয়েছে, তা মনে রাখা, মনে করানো এবং নতুন প্রজন্মকে জানানো। দ্বিতীয়ত, শহিদতর্পণ এবং গণআন্দোলনের সব শহিদের পরিবারের প্রতি কর্তব্যপালনের দায়বদ্ধতা অব্যাহত রাখা। এবং তৃতীয়ত, রাজনীতির অভিমুখ নির্ধারণে নতুন শপথ এবং নেত্রীর বার্তা।
এরপরেই তিনি লিখেছেন, একুশে জুলাই প্রতিবার এক একটি প্রেক্ষাপটে রাজ্য রাজনীতির দিকনির্দেশিকা হয়ে উঠেছে। এবারও আমাদের শপথ হবে একদিকে বাংলার মানুষের সমর্থন ও আশীর্বাদকে সম্মান জানিয়ে বাংলার উন্নয়ন ও সুরক্ষা আরও সুনিশ্চিত এবং দৃঢ় করা। বঙ্গবিরোধী অশুভ শক্তির চক্রান্তের মোকাবিলা করা। আর সেই সঙ্গে দিল্লি থেকে জনবিরোধী শক্তির অবসান ঘটিয়ে জনমুখী, জনস্বার্থবাহী শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে বাংলার। আর এইবছর এই একুশে জুলাই যোগ হচ্ছে আরেকটি তাৎপর্য। সেটি হল সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র ‘জাগো বাংলার দৈনিক সংস্করণের প্রথম বর্ষপূর্তি।
আগে দীর্ঘদিন ধরে ‘জাগো বাংলা’ ছিল সাপ্তাহিক। গতবছর এই একুশে জুলাই থেকে দৈনিক সংস্করণ প্রকাশ শুরু হয়েছিল। ষোল পাতার ট্যাবলয়েড। কলকাতায় মুদ্রিত, সারা বিশ্বে ই-পেপার। আমরা চেষ্টা করেছি ‘জাগো বাংলা’কে একটি সম্পূর্ণ দৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে। এতে শুধু তৃণমূল কংগ্রেসের খবরই থাকছে না, থাকছে সামগ্রিক রাজনীতি, গোটা রাজ্য, দেশ- বিদেশ, ঘটনা-দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, খেলা, সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিভাগ। থাকছে তৃণমূল পরিবারের বিভিন্ন কর্মসূচি। পার্টি কী বলছে, কোন ইস্যুতে পার্টির কী অবস্থান, উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ, আন্দোলনের কর্মসূচি, সব থাকছে দৈনিকে। অন্যান্য সংবাদমাধ্যম নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু আমাদের দলের, আমাদের নেত্রীর ভাবনা যথাযথভাবে তুলে ধরা হচ্ছে ‘জাগো বাংলা’তে। পাশাপাশি আমাদের প্রতিপক্ষ যে চক্রান্ত করছে, কুৎসা করছে, বিকৃত অপপ্রচার করছে, তার জবাব দিতেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে ‘জাগো বাংলা।’
প্রতিবেদনে তাঁর দাবি, একটা সময় অনেক স্বপ্ন নিয়ে পার্টির নিজস্ব কাগজ শুরু করেছিলেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্পাদক পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাপ্তাহিক হিসেবে কাগজকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। নেত্রীর স্বপ্নকে আরও সময়োপযোগী ও দৃঢ় রূপ দিতে এখন এই দৈনিক সংস্করণের পথ চলা। আপনারা আরও বেশি করে পড়ুন, ই-পেপার দেখুন, হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ তৈরি করে নিত্যনতুন পাঠকপাঠিকাকে যুক্ত করুন গোটা বাংলায়, গোটা দেশে এবং বিশ্বজুড়ে। অভিষেকের অঙ্গীকার, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের অধিকার অর্জন এবং অধিকার রক্ষার দল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বহু লড়াই, আত্মত্যাগ, চড়াই উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে দল এগিয়ে চলেছে। আগামীদিন আরও নিবিড় জনসংযোগ, আত্মবিশ্লেষণ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে নতুন চেহারার তৃণমূল ভবিষ্যতকে আরও সুন্দর ও উন্নততর করার লক্ষ্যে এগোতে থাকবে। আর তার কন্ঠ হয়ে মানুষের দরবারে রোজ সকালে উপস্থিত থাকবে ‘জাগো বাংলা’।