চিকিৎসা নিয়ে পড়ার সর্বভারতীয় এন্ট্রান্স পরীক্ষা ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি এন্ট্রান্স টেস্ট (নিট)-এর কেরলের কোল্লামের কেন্দ্রে হওয়া ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন জনৈকা ছাত্রী। ঘাড়ের দু’পাশ থেকে চুল টেনে এনে জামার উপর ফেলে রেখেছিলেন তারা, যাতে কিছু বোঝা না যায়। একই কেন্দ্রে তাঁদের সঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন সমবয়সি কয়েকশো ছাত্র। পুরুষ হল-রক্ষীরাও ঘোরাফেরা করছিলেন চার পাশে। তাঁদের মধ্যে অন্তর্বাস ছাড়া বসে থাকতে অস্বস্তি বোধ করছিলেন প্রত্যেকেই। পেশা-প্রবেশের বড় পরীক্ষা দিতে এসে তারা ভেবেই পাচ্ছিলেন না প্রশ্নপত্রে মন দেবেন, না শরীরের দিকে। তিনি জানিয়েছেন, ওই মানসিক যন্ত্রণা শুধু পরীক্ষার হলেই থেমে থাকেনি। পরীক্ষা দিয়ে বেরোনোর সময়েও হেনস্থা করা হয় তাঁদের। নিরাপত্তাকর্মীদের অমানবিক ব্যবহারে কেঁদেও ফেলেছিলেন বহু ছাত্রী। নিজের অভিজ্ঞতা কথা বলতে গিয়ে কান্না চেপে রাখতে পারেননি কেরলের কোল্লামের বাসিন্দা ওই তরুণীও। এর আগে তাঁরই মতো এক পরীক্ষার্থীর বাবা ছাত্রীদের হেনস্থার কথা প্রথম প্রকাশ্যে আনেন। তার পরেই একে একে আরও কয়েক জন ছাত্রী এ ব্যাপারে অভিযোগ জানান। কোল্লামের এই ছাত্রী জানালেন, সে দিন পরীক্ষাহলে ঢোকার আগে এবং পরে ঠিক কী কী ঘটেছিল।
প্রসঙ্গত, সেদিন পরীক্ষার হলে ঢোকার শুরুতেই দু’টি লাইনে দাঁড়াতে বলা হয়েছিল মহিলা পরীক্ষার্থীদের। ঘটনাটির বর্ণনা দিয়েছেন ওই তরুণী। তিনি বলেন, “ওরা আমাদের ডেকে বলে শরীর স্ক্যান করা হবে। আমরা ভেবেছিলাম স্ক্যান করে ছেড়ে দেবে। কিন্তু স্ক্যান করার পর আমাদের দু’টি লাইনে দাঁড় করানো হল। যাঁদের অন্তর্বাসে ধাতব হুক নেই তাঁদের একটি লাইন, আরেকটি…।” দ্বিতীয় লাইনটি কাদের প্রশ্নের জবাবে ওই ছাত্রী বলেন, “আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয় আমার অন্তর্বাসে ধাতব হুক আছে কি না। হ্যাঁ বলতেই ওরা ওই দ্বিতীয় লাইনে দাঁড়াতে বলে।” ঠিক কী হতে চলেছে তখনও বুঝতে পারছিলেন না ওই ছাত্রী। “ওরা আমাদের অন্তর্বাস খুলে একটি টেবলে রাখতে বলে। আমি যখন এসে সেই টেবলের সামনে পৌঁছই, তত ক্ষণে সেখানে অন্তর্বাসের একটি স্তূপ তৈরি হয়ে গিয়েছে। আমাদের ভয় হচ্ছিল যখন ফিরব তখন নিজের অন্তর্বাস ফেরত পাব তো! অবশ্য ফেরার সময় ওই ঘেঁটে থাকা স্তূপের ভিতর থেকে আমি নিজের অন্তর্বাস শেষপর্যন্ত খুঁজে পেয়েছিলাম। ফেরার সময় নিজের অন্তর্বাস খুঁজে পাব কিনা তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল। একটি ঘরে ডাই করে রাখা ছিল প্রায় ১০০ জন পরীক্ষার্থীর অন্তর্বাস। ভাগ্যক্রমে আমি নিজের অন্তর্বাস খুঁজে পাই। অনেকে তা হারিয়ে ফেলে কেঁদে ফেলে। মহিলা নিরাপত্তারক্ষীর তা দেখে বলেন, কাঁদার কী আছে। পরার দরকার নেই, হাতে নিয়ে বেরিয়ে যাও। সবটাই দুঃস্বপ্নের মতো”, জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রী।