যতদিন এই বেঁচে থাকা, এই জীবন। এই প্রাণ। ততদিনই আমরা। মানুষজন। গুরুত্ব। কিন্তু তারপর? সেই দেহ? অঙ্গ প্রত্যঙ্গ? নাহ্। ‘জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা।’ রবীন্দ্রনাথের এই কবিতার পঙক্তি বারংবার সত্যি হয়েছে। আবারও তার প্রমাণ দিলেন মঞ্জুবালা ভক্ত। মৃত্যুর পর কিডনি, লিভার, হার্ট দিয়েছিলেন আগেই। এবার অঙ্গহীন শরীরটাও দান করলেন আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে। আরজিকর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চামড়া ছাড়িয়ে প্রয়াত মঞ্জুবালার কঙ্কালটা বের করা হবে। ডাক্তারি ছাত্রদের পড়াশোনায় তা কাজে লাগবে। শহরে তো বটেই, এ রাজ্যে প্রথম অঙ্গদানের পর কোনও মৃতদেহ দান করা হল। গত ৪ জুলাই বাইক দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর আঘাত পান মঞ্জুবালা ভক্ত। তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। ৬ জুলাই হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয় ব্রেন ডেথ হয়েছে মঞ্জুদেবীর।
স্ত্রীর মৃত্যুর পর অন্যজনের দেহে বেঁচে থাকুন, চেয়েছিলেন স্বামী রমেশ ভক্ত। এর পরই যোগাযোগ করা হয় গণদর্পণের সঙ্গে। সেইমতো মঞ্জুবালা দেবীর কিডনি, হার্ট, কর্নিয়া দান করা হয়। পড়ে ছিল অঙ্গহীন দেহটা। সেটাও সোমবার দান করা হল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগে। বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ভাস্কর পাল জানিয়েছেন, মৃত্যুর পর দেহের সব কিছু যে নতুন করে কাজে লাগতে পারে তার প্রমাণ দিয়ে গেলেন মঞ্জুদেবী। সাধারণত অরগ্যান ডোনেশনের পর মৃতদেহ দান করার নজির নেই। উল্লেখ্য, গণদর্পণের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত ব্রজ রায়ের প্রচেষ্টাতেই বাংলায় প্রথম মরদেহের ব্যবহারপোযোগী কোষগুলির সদ্ব্যবহার করতে পারেন চিকিৎসাশাস্ত্রের মানুষজন। গণদর্পণের পক্ষ থেকে শ্যামল চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আজ দিকে দিকে যে অঙ্গ প্রতিস্থাপন হচ্ছে, তা সম্ভব হচ্ছে দ্রুত ব্রেন ডেথ ঘোষণার ফলেই।