কাজে এল না কোনোরকম ছল-বল-কৌশল। পাহাড়ের মানুষ জিটিএ নির্বাচন বয়কট করবে, এমনই আশা ছিল তাদের। চাপ বাড়বে রাজ্য সরকারের ওপর। ফলত পৃথক রাজ্য আদায়ের দাবিও পূর্ণ হবে অচিরেই। আদা-জল খেয়ে ছক কষেই ভোট বয়কটের ডাক দেয় পাহাড়ের দুই দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও জিএনএলএফ। সেই ছকের সহযোগী ছিল বিজেপিও। ৩ দলই পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচন বয়কট করে। তাদের ধারণা ছিল, পাহাড়ের মানুষ তাদের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন। কিন্তু হয়েছে হিতে-বিপরীত। পাহাড়ের মানুষ দলে দলে বুথে গিয়ে নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন। ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ জিটিএ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আগেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল পাহাড়ের জনতার ওপর আদৌ এই ৩ দলের কোনও রাশ রয়েছে কিনা। বুধবার প্রকাশিত হয়েছে জিটিএ নির্বাচনের ফল। আর তাতেই দেখা যাচ্ছে পাহাড়ের ক্ষমতার নয়া ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছেন অনীত থাপা। আর এই ফলই কার্যত বলে দিচ্ছে পাহাড়ে বিমল গুরুংয়ের রাজনৈতিক অধ্যায় আপাতত ইতির দিকেই। কপাল পুড়েছে বিজেপিরও।
প্রসঙ্গত, জিটিএ ভোটের ফলপ্রকাশের পর পাহাড়বাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “পাহাড়ের মানুষে যে ভাবে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোটে অংশ নিয়েছেন, সে জন্য তাঁদের ধন্যবাদ। দার্জিলিঙের মানুষকে অভিনন্দন। আমরা খুশি। শান্তিপূর্ণ ভাবে পাহাড়ের মানুষ ভোটে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের ধন্যবাদ। আমাদের সঙ্গে অনীতের জোট হয়েছিল। ওঁরাও ভাল করেছেন।” তবে, তৃণমূলকে ১০টি আসন ছেড়েও সেখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। ৫টি আসনে তৃণমূলকে হারাতেও পেরেছেন, কিন্তু পাহাড়ের রাজনীতিতে তৃণমূলের উত্থান পুরোপুরি আটকাতে পারেননি। আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, জিটিএ দখলের পরে তৃণমূলের সঙ্গে অনীতের সম্পর্ক কোন পথে এগোবে? অনীত অবশ্য জানেন জিটিএ-র মাধ্যমে পাহাড়ে কাজ করতে হলে প্রতি পদে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা তাঁর চাই। রাজ্য সরকার পাশে থাকলে তবেই পাহাড়ের ক্ষমতা তাঁর হাতে থাকবে। নাহলে তাঁরও অবস্থা হতে পারে মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুংয়ের মতোই। গতকাল পাহাড়ের যে ফল সামনে এসেছে তাতে সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ ফল হিসাবে উঠে এসেছে তৃণমূলের উত্থান। তাঁরা ১০টি আসনে লড়ে ৫টিতে জয়ের মুখ দেখেছে। নির্বাচনের প্রাক্কালে পাহাড়ে ঘাসফুল শিবিরের জেতার তেমন সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। কিন্তু সব জল্পনাকে নস্যাৎ করে পাহাড়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করল ঘাসফুল শিবির। গুরুং এখন না বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে পারবেন না তৃণমূলের সঙ্গে। না রইল তাঁর কোনও গ্রহণযোগ্যতা, না কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা। একই অবস্থা বিজেপি ও জিএনএলএফেরও। এরা জিটিএ ভোট ঠেকাতে আদালতে গিয়েছে, গুরুং অনশন করেছেন, শেষে ৩ জনে মিলে ভোট বয়কটের ডাকও দিয়েছিলেন। কিন্তু পাহাড়ের মানুষ আর এদের কথায় কান দিতে চায়নি। তাঁদের ওপর এই ৩ দলের আর যে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই সেটাও সামনে চলে এল। আগামী দিনে এরা আর না পাহাড়ে অশান্তি বাধাতে পারবেন, না পৃথক রাজ্যের দাবি উত্থাপন করতে পারবেন। তাই পাহাড়ে আপাতত শান্তি ও সম্প্রীতির হাওয়া।