অব্যাহত মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক টানাপোড়েন। চাপানউতোর ও উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। এর ফলে রাজ্যে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে রাজনৈতিক মহল। পরিস্থিতি সামাল দিতে আগাম কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে তাদের মোতায়েনের নির্দেশ আসতে পারে। অন্য দিকে, বিধান সভায় ডেপুটি স্পিকার শিবসেনার ১৬ জন বিধায়ককে অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছেন। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ে মামলা চলছে। মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক উত্তেজনার পাশাপাশি বিধায়কদের নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দিয়েছে। শিবসেনার বিদ্রোহীরা আদৌ অযোগ্য বলে গণ্য হবেন কি? উঠছে প্রশ্ন। উল্লেখ্য, ভারতের রাজনীতিতে হঠাৎ দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া, অন্য রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়া, সরকারের পতন ঘটানো নতুন নয়। এই ধরনের ঘটনা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতেই অযোগ্যতা বিষয়ক দলত্যাগী আইন নিয়ে আসা হয়। এই দলত্যাগী আইন বিধানসভা ও লোকসভা উভয়কক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ১৯৬৭ সালে হরিয়ানার গয়া লাল নামের এক বিধায়ক একই দিনে তিন বার নিজের দল পরিবর্তন করে। এরপরেই ভারতীয় রাজনীতিতে ‘আয়া রাম গয়া রাম’ কথাটি চালু হয়। ভারতে বিধায়কদের দলত্যাগের জেরে একাধিক রাজ্যে সরকারের পতন হয়। যার ফলে জারি করা রাষ্ট্রপতি শাসনের।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সালে দলত্যাগী আইন নিয়ে আসা হয়। এই আইনে বলা হয়, নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের কোনও প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার পরে যদি স্বেচ্ছায় দলত্যাগ করেন বা দলের কোনও নির্দেশের বিপরীতে গিয়ে বিধানসভা বা লোকসভায় ভোট দান থেকে বিরত থাকেন, সেক্ষেত্রে তাঁকে অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হবে। তিনি দলত্যাগী আইনের অধীনে পড়বেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থে এই আইনটির একাধিকবার সংশোধন করা হয়। ২০০৩ সালে দলত্যাগ বিষয় আইনটি শেষ সংশোধন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, দলের নির্বাচিত দুই তৃতীয়াংশ সদস্য একত্রিত হন। তাঁরা অযোগ্যতা থেকে অব্যাহতি পাবেন। অন্যদলের সঙ্গে জোট করার সময় মূল দলটির দুই তৃতীয়াংশের সমর্থনের প্রয়োজন হবে। ২০১৯ সালে মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনে শিবসেনা ৫৬ টি আসনে জয় লাভ করেছিল। এক বিধায়কের মৃত্যুর পর শিবসেনার বর্তমানে ৫৫টি বিধায়ক রয়েছে। বিদ্রোহী বিধায়ক একনাথ শিন্ডে দাবি করেছেন, তাঁকে সমর্থন করছেন শিবসেনার ৪০ জন বিধায়ক। যদি শিন্ডের দাবি সত্যি হয়, সেক্ষেত্রে বিদ্রোহী কোনও বিধায়ককে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করা যাবে না। দুই তৃতীয়াংশের সমর্থন নিয়ে শিন্ডে অন্য একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সরকার গঠন করতে পারবেন।২০১৯ সালে গোয়ায় নির্বাচনে ১৫টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। ১০ জন কংগ্রেস ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেন। বিজেপি গোয়ায় সরকার গঠন করে। গোয়ায় বিধানসভা ৪০টি আসনের। গোয়া হাইকোর্ট দলত্যাগী আইনের আওতা থেকে গোয়ার বিধায়কদের মুক্তি দিয়েছিল। কারণ একত্রিত হয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন দুই-তৃতীয়াংশ কংগ্রেস বিধায়ক।