একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই কার্যত শনির দশা বঙ্গ বিজেপিতে। একের পর এক নেতাদের দলত্যাগ, সাংগঠনিক দুর্বলতা ক্রমশ জর্জরিত করেছে পদ্মশিবিরকে। এবার তৃণমূল স্তরে সংগঠন বাড়াতে গিয়ে নয়া কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আরও বিপাকে বঙ্গ বিজেপি। পুর এলাকায় ওয়ার্ড, গ্রামাঞ্চলে অঞ্চল ও এগুলির উপর ব্লক কমিটি গঠন করতে নেমে আবার ধাক্কা খেতে হচ্ছে গেরুয়া শিবিরকে। এই তিনটি কমিটি সাজাতে নতুন প্রায় ৬০ হাজার জন কর্মীকে দায়িত্ব দিতে হবে। কিন্তু দলের নিচুতলায় পতাকা ধরার লোক কার্যত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কাজেই তিন ধরনের কমিটি করতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে রাজ্য বিজেপি। হায়দ্রাবাদে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের আগে যা নতুন করে অস্বস্তি বাড়াল গেরুয়াশিবিরের অন্দরমহলে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কলকাতা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার উপস্থিতিতে রাজ্য কার্যকারিণী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানেই ঠিক হয়েছিল ওয়ার্ড ও অঞ্চল কমিটি গঠনের। যার উপরে থাকবে ব্লক কমিটি। এই তিন ধরনের কমিটিতে ৮ থেকে ৯ জন করে সদস্য থাকবে। এই মুহূর্তে ৪৮০০ অঞ্চল রয়েছে। ব্লকের সংখ্যা ৩৬৮টি। এছাড়া ওয়ার্ড মিলিয়ে পুরো সংখ্যাটা ৬ হাজারেরও বেশি। আর এই ৬ হাজার নতুন কমিটির প্রতিটিতে যদি ১০ জন করে সদস্য করতে হয় তাহলে ৬০ হাজার জন লোক লাগবে। রাজ্য বিজেপির তরফে বলা হচ্ছে, যাঁরা পদ পাননি তাঁদের ওইসব কমিটিতে রাখা হবে। কিন্তু দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে, নিচুস্তরে এই ৬০ হাজার লোক কোথা থেকে পাওয়া যাবে? কারণ, ৫০ শতাংশ মণ্ডল কমিটিই এখনও গঠন করা যায়নি বলে রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর। সেখানে ব্লক-অঞ্চল-ওয়ার্ড কমিটি গড়তে নেমে মহা সমস্যায় পদ্ম-নেতৃত্ব। পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখেই জে পি নাড্ডা ও বি এল সন্তোষদের উপস্থিতিতে বৈঠকে অঞ্চল ও ব্লক কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত হয়।
উল্লেখ্য, ২৫শে জুন জরুরি অবস্থা বিরোধী কর্মসূচী পালন করে থাকে বিজেপি। শনিবার এই দিনটিতে কর্মসূচী ছিল ম্যাড়মেড়ে। কারণ, বাংলায় ৩৫৬ ধারা জারি নিয়ে বারবার সরব হতে দেখা গিয়েছে বঙ্গ বিজেপি নেতাদের। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের তিরস্কারে সেই দাবি নিয়ে আপাতত মুখে কুলুপ এঁটেছেন বঙ্গ বিজেপি নেতারা। দলের একাংশের প্রশ্ন, রাজ্যে নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দিয়ে কেন্দ্রীয় এতদিন হস্তক্ষেপের দাবি করে আসা বঙ্গ নেতারা আর কোন মুখে কংগ্রেস আমলের জরুরি অবস্থার প্রতিবাদ করবেন? তাই জরুরি অবস্থা বিরোধী কর্মসূচী নিয়ে এবার বেশি মাতামাতি তাঁদের করতে দেখা যায়নি। এর আগে এইদিনে কলকাতায় সভা বা মিছিল করেছে গেরুয়া শিবির। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও এসেছেন। কিন্তু এবার রাজ্য বিজেপির ফেসবুকে জরুরি অবস্থা সম্পর্কিত একটি টুইট ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর একটি টুইট ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় আর কোনও রাজ্য নেতার টুইট সেভাবে দেখা যায়নি। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও কোনও টুইট করেননি। এদিকে, দিলীপ ঘোষ নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে দাবি করেছেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেই ৯৭ জনের নামের তালিকা রয়েছে। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিজেপির আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে ফের গুঞ্জন শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।