ক্ষমতার আসার পর থেকেই একাধিক কারণে নানান সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদী সরকার। ক্রমে ক্রমে লম্বা হয়েছে ব্যর্থতার তালিকা। এবার প্রকাশ্যে এল নতুন তথ্য। দেশের অন্যতম অগ্রণী প্রতিষ্ঠান আইআইটিগুলির পরিচালক নিয়োগ করতে কার্যত অসফল কেন্দ্র। ইন্টারভিউ নেওয়ার পরে দুই মাসেরও অধিক সময় অতিক্রান্ত, কিন্তু আজও আটটি আইআইটিতে পরিচালক নিয়োগ করতে পারেনি মোদী সরকার। যা ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নিয়োগে কাল বিলম্ব মোদী সরকারের রোগে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আদপে প্রবণতার উৎপত্তির কারণ হল, সবক্ষেত্রেই নিজের অনুগত সমমনস্ক ব্যক্তিকে বসাতে চায় মোদী সরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রেও সেই পন্থা নিয়েছে তারা। চলতি বছরের ১৫ই মার্চ ভুবনেশ্বর এবং রুরকিতে আইআইটি-এর পরিচালক নিয়োগ করার জন্যে ইন্টারভিউ নিয়েছিল শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের নেতৃত্বে গঠিত প্যানেল। শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বেই গঠিত আরও একটি প্যানেল গত ১১ই এপ্রিল জম্মু, গোয়া, ধারওয়াদ, পালাক্কাদ, ভিলাই এবং তিরুপতিতে আইআইটি-এর পরিচালক পদের জন্য প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নিয়েছিল। সাধারণত ইন্টারভিউয়ের পরে নির্বাচিত প্রার্থীদের নিয়োগপত্র হাতে পেতে মোটামুটি দুই সপ্তাহ সময় লাগে। ভারতের রাষ্ট্রপতি, আইআইটি-গুলির পরিদর্শক, তার অনুমোদনের পরেই নিয়োগ করা হয়। যদিও কোন নির্দিষ্ট সময়সূচী নেই। তবুও এক্ষেত্রে নয় সপ্তাহ অতিক্রান্ত তবুও কোন নিয়োগের বালাই নেই।
উল্লেখ্য, ভুবনেশ্বরের পরিস্থিতি খুবই বিভ্রান্তিকর। চলতি বছরের মার্চ মাসে মন্ত্রক দ্বিতীয় ইন্টারভিউ নিয়েছিল। এর আগে কোন কারণ উল্লেখ না করেই ২০২১-এর অক্টোবরের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করার আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে একটি ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল। বিগত দুই বছরেরও বেশি সময় যাবৎ প্রতিষ্ঠানটি তত্ত্বাবধায়ক পরিচালকদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। সরকার পরিচালক পদে প্রার্থী বাছাই করতে না পারায়, পরিচালক নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইল রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, বেনজিরভাবে সাংবিধানিক অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এই ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নিয়োগের বিষয় হস্তক্ষেপ করছে। বলাইবাহুল্য, দেশে এমনটা কখনও হয়নি। তাদের দাবি, নিয়োগের এই বিলম্বের নেপথ্য কারণ হল বিজেপি তাদের আদর্শগতভাবে উপযুক্ত প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না। পরিচালকরা আইআইটির কার্যনির্বাহী প্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মতোই তাদের ক্ষমতা। তারাই কর্মী নিয়োগ করে। বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয় সংক্রান্ত রীতিনীতি নির্ধারণ করেন। আইআইটি ভুবনেশ্বরের একজন শিক্ষকের কথায়, স্থায়ী পরিচালক না থাকায় আইআইটির সমস্ত কাজকর্ম বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এই আটটি ছাড়াও, আরও ছয়টি আইআইটি – বোম্বে, দিল্লী, রুরকি, মান্ডি, রোপার এবং গান্ধীনগরে স্থায়ী চেয়ারপার্সন নেই। এই ছয়টি আইআইটি-এর মধ্যে রুরকিতে ২০১৭ সাল থেকে কোনও স্থায়ী চেয়ারপার্সন নেই। ২০১৭ সালে, দেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বিজ্ঞানী অনিল কাকোদকারকে আইআইটি রুরকির চেয়ারপার্সন হিসেবে নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছিলেন। কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণেই সেই অনুমোদন কার্যকর হয়নি।
প্রসঙ্গত, বিগত ২০১৭ সালের জুলাই মাসে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মেয়াদ শেষ হয়। তিন বছর পর, সরকার চুপিসারে আইআইটি হায়দ্রাবাদের চেয়ারপার্সন বি.ভি.আর.মোহন রেড্ডিকে আইআইটি রুরকির অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছিল। উড়িষ্যার সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন স্থায়ী উপাচার্য নেই। বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি, দেশের অন্যতম প্রধান ও প্রথম সারির একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মোদী সরকারের শিক্ষা মন্ত্রক বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যনির্বাহী পরিষদে সদস্য নিয়োগ না করায় বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি শিক্ষক নির্বাচন করে রাখা সত্ত্বেও নিয়োগ পত্র দিতে পারেনি। রাকেশ ভাটনাগর উপাচার্য থাকাকালীন (রাকেশ ভাটনগর ২০২১ সালের মার্চ মাসে অবসর গ্রহণ করেছিলেন) বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন। নিয়োগপত্র প্রস্তুত কিন্তু কার্যনির্বাহী পরিষদের অনুমোদন নিয়েই নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। তা না থাকায় নিয়োগ হয়নি। গঠিত হয়নি কাউন্সিলও। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ১৪ই জুন ১৮ মাসে বিভিন্ন সরকারী বিভাগ মিলিয়ে ১০ লক্ষ চাকরির কথা টুইট করে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরেই শিক্ষা মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান টুইট করে জানান যে কেন্দ্র সরকারের অধীনস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সব শূন্যপদগুলি শীঘ্রই পূরণ করা হবে। উচ্চ শিক্ষা বিভাগে গত এক বছরে অর্থাৎ ৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ এবং ডট কম, ২০২২ এর মধ্যে এক বছরের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৪৮৯৭ টি শিক্ষকপদ শূন্য ছিল এবং চলতি বছরের ১৬ মার্চের মধ্যে, এই পদগুলির মধ্যে মাত্র ৫৭১৬ টি, অর্থাৎ ৪০ শতাংশের কম পদের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল যার একটি পদেও নিয়োগ করা হয়নি। নিয়োগের বিলম্বের কারণও মোদী সরকারের তরফে স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। বাড়ছে ধোঁয়াশা।