পুরনো ফর্মুলা মেনেই সদ্য সমাপ্ত উত্তরপ্রদেশ ভোটের সময় পিছিয়ে থাকা অংশের পাশাপাশি সমাজের অগ্রবর্তী ভাগ বলে পরিচিত ব্রাহ্মণদের নানাভাবে খুশি করার চেষ্টা করেছেন তিনি। রাজ্যজুড়ে করেছেন ব্রাহ্মণ সম্মেলন। কিন্তু তাতেও কার্যসিদ্ধি হয়নি। উত্তরপ্রদেশের তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী তথা দলিত নেত্রী মায়াবতীর দল বহুজন সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে মাত্র একটি আসন। তাদের দলিত ভোট চলে গিয়েছে বিজেপির দিকে। আর মুসলিম ভোটে থাবা বসিয়েছেন সমাজবাদী পার্টি। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছেন মায়াবতী। তাই এবার দলের ভোট রাজনীতিতে বদলে আনতে চাইছেন তিনি।
২০০৭-এ উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতায় আসার পেছনে মায়াবতীর সবচেয়ে বড় চমক ছিল সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা সামাজিক সমীকরণ বদল। সেবার বহুজন অর্থাৎ সমাজের অন্ত্যজ ও দলিত শ্রেণির সামাজিক ন্যায় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত বহুজন সমাজবাদী পার্টি সেই নির্বাচনে হাত মেলায় ব্রাহ্মণ সমাজের সঙ্গে। আর এই সামাজিক সমীকরণ ওষুধের কাজ করে নির্বাচনে। বিপুল আসন নিয়ে ক্ষমতায় বসেন মায়াবতী। কিন্তু ২০১২ থেকে শুধু হার আর হার। ২০১৭-র বিধানসভা তার আগে ও পরে ২০১৪ এবং ২০২৯ এর লোকসভা ভোটে বড় ধাক্কা খায় বিএসপি। এবছর মাত্র একটি আসনে নেমে গিয়েছে।
কিন্তু উত্তরপ্রদেশের দুটি লোকসভা নির্বাচনের আসন্ন নির্বাচন ঘিরে মায়াবতীর পদক্ষেপ দেখে রাজনৈতিক মহল নিশ্চিত ব্রাহ্মণদের সঙ্গে দ্রুত দূরত্ব বানাতে চাইছেন দলিত নেত্রী। আবার ফিরতে চাইছেন দলিত-মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে। যে দুটি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হবে সেগুলি ২০১৯ – এর ভোটে জিতেছিল সমাজবাদী পার্টি। এরমধ্যে রামগড় লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন পার্টির নামজাদা নেতা আজম খান। বেআইনি অর্থ লেনদেন সহ একাধিক মামলায় তিনি জেল বন্দি ছিলেন। জেলে থেকেই বিধানসভার নির্বাচনেও জয়ী হয়েছেন এবং সিদ্ধান্ত করেছেন বিধায়কই থাকবেন। সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্ত হয়েছেন।
সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ রামগড় কেন্দ্রে আজম খানের ঘনিষ্ঠ একজনকে টিকিট দিয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণ হল মায়াবতী ওই কেন্দ্রে কোনও প্রার্থী দেননি। অর্থাৎ তাঁর ভাণ্ডারে যেটুকু ভোট আছে তা সমাজবাদী পার্টির মুসলিম প্রার্থী যাতে পান সেই বার্তা দিতে চেয়েছেন বহেনজি। অন্যদিকে, অখিলেশ এবার বিধানসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা বিরোধী দল নেতা হয়েছেন। ইতিমধ্যে লোকসভা আসন থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তিনিও। তাঁর আজমগড় কেন্দ্রে মায়াবতী একজন মুসলিমকেই প্রার্থী করেছেন অর্থাৎ অখিলেশের আসনে তিনি আবার চাইছেন মুসলিম ভোট যাতে বহু জন সমাজবাদী পার্টিতে ফেরত আসে।
সব মিলিয়ে মায়াবতীর এই সিদ্ধান্ত খুবই সুচিন্তিত এবং দীর্ঘদিনের অংক মাথায় রেখে, মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
Read: লোন পাইয়ে দেওয়ার নামে আর্থিক প্রতারণা – গ্রেফতার বিজেপির মহিলা কর্মী ও তাঁর মেয়ে
Twitter: লোন পাইয়ে দেওয়ার নামে আর্থিক প্রতারণা – গ্রেফতার বিজেপির মহিলা কর্মী ও তাঁর মেয়ে
Mayawati