নজরুল মঞ্চে দর্শক ধরে মেরেকেটে আড়াই হাজার। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেখানে অন্তত সাত হাজার লোক ঢুকেছিলেন বলে জানা গেছে। অনেকে নাকি পাঁচিল টপকেও ঢুকেছিলেন। ভিড় সামলাতে নজরুল মঞ্চের সাতটি দরজার মধ্যে পাঁচটিই খুলে দেওয়া হয়েছিল বলে ওই সূত্রের দাবি। এর ফলে গরম আরও বাড়ে। আর সেই গরমের মধ্যেও অনুষ্ঠান চালিয়ে যান কেকেআর। ৫৩ বছর বয়সি গায়কের সুরে-তালে দুলে হয়ে উঠছিল তরুণ-তরুণীদের সমুদ্র। জন জোয়ার। এমনটাই তো হয়, এমনটাই তো হওয়ার কথা। কিন্তু তার পরেও এমন কিছু হল, যা আশা করেননি কেউ। প্রাণ চলে গেল গায়কের।
এও সম্ভব? কাল রাতের মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকেই একের পর এক ভিডিও সামনে এসেছে কেকে-র পারফরমেন্সের এবং অসুস্থতার। কোনও ভিডিওয় দেখা গেছে, স্টেজের ওপরেও ভিড় করে রয়েছে দর্শকরা। কোনও ভিডিওয় দেখা গেছে, গাইতে গাইতে দরদর করে ঘামছেন কেকে, জল খাচ্ছেন, ঘামে ভেজা জামা দেখাচ্ছেন দর্শকদের, আলো বন্ধ করে দিতে বলছেন। এখানেই শেষ নয়। ভিডিওয় দেখা গেছে, মঞ্চের সামনে ভিড় হটাতে একটা সময় সেখানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থেকে রাসায়নিক স্প্রে করা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, সেই স্প্রে-র কারণেই কেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন! যদিও তেমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি এখনও পর্যন্ত।
জানা গেছে, নজরুল মঞ্চে গান শেষ করার পরেই ধর্মতলার হোটেলে ফিরে আসেন প্রয়াত গায়ক। ফেরার পথে গাড়িতে শীত লাগায় তিনি এসি বন্ধ করে দিতে বলেছিলেন। এমনকি কেকে-র হাত-পায়ের পেশিতেও খিঁচুনি হচ্ছিল বলে জানা গেছে। হোটেলে ফেরার পরেও তাঁর সঙ্গে ছবি তুলতে অনেকে ভিড় করেছিলেন, তিনি বারণ করে দেন। এর পরেই তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, পড়েও যান, চোট পান। তার পরেই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।
ময়নাতদন্ত না হলে মৃত্যুর নির্দিষ্ট কারণ বোঝা না গেলেও, এ কথা অস্বীকার করার কারণ নেই, যে বেসামাল, বেলাগাম ভিড় এবং তার জেরে বিশৃঙ্খলার অভাব ছিল না গতকাল। কিন্তু তার জেরে এতটা অসুস্থ হয়ে পড়লেন কেকে! তার আগে তিনি থামলেন না, বা আয়োজক-উদ্যোক্তারা কেউ থামালেন না তাঁকে! তথ্য বলছে, কেকে-র হার্টের তেমন সমস্যা ছিল না। তিনি শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন করতেন। ফিট ছিলেন শারীরিক ভাবে। সে জন্যই কি নিজের শেষবিন্দু পর্যন্ত নিংড়ে দিতে চেয়েছিলেন দর্শকদের জন্য? উত্তর জানা যাবে না হয়তো। ভুলগুলো সংশোধন করার সুযোগও আসবে না।
এবিষয়ে এখনও মুখ খোলেননি কলেজ কর্তৃপক্ষ বা অনুষ্ঠান আয়োজক সংস্থা। কিন্তু তার পরেও সকলেই বলছেন, এহেন ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার সময় এসেছে। এসবের পাশাপাশিই আজ, বুধবার সকালে চিকিৎসক কুণাল সরকার তাঁর ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেছেন। যেখানে প্রয়াত কেকে-র একটি সাদা-কালো ছবি দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘যতটা দুঃখ, ততটাই লজ্জা। বেসামাল ভিড়। এসি বেহাল-ভীষণ গরম। মুখের উপর ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার স্প্রে করা। দু’ঘন্টার উপর সময় নষ্ট করে তার পর শেষ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। আমাদের ক্ষমা করো।’