বিগত কিছু দিন ধরেই বেসুরো তিনি। এই মুহূর্তে এনডিএ-র সবথেকে বড় শরিক হলেও সাম্প্রতিক কালে বারবারই বিজেপির সঙ্গে তাঁর দলের মতানৈক্য সামনে এসেছে। আরজেডি-সখ্য থেকে শুরু করে তাঁর জাতশুমারি নিয়ে অবস্থান গেরুয়া শিবিরকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। এবার আরও আগ্রাসী বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। মোদীর মন্ত্রিসভায় জেডিইউ-এর একমাত্র মন্ত্রী এবং বিজেপি ঘনিষ্ঠ রামচন্দ্র প্রসাদ সিংকে শেষ পর্যন্ত রাজ্যসভায় যাওয়ার টিকিট দিলেন না তিনি। বেশ কিছু দিন ধরেই এ নিয়ে জল্পনা চলছিল। কিন্তু রাজ্যসভার আসন্ন নির্বাচনে বিহার থেকে যে একটি আসনে নীতিশের দলের জয় নিশ্চিত সেটির জন্য প্রার্থী করা হয়েছে জেডিইউ-এর ঝাড়খণ্ডের সভাপতি খিরো মাহাতকে।
রামচন্দ্র প্রসাদ বা আরসিপিকে টিকিট না দিয়ে নীতিশ বিহারের রাজনীতিকে আরও বাঁকের মুখে ঠেলে দিলেন বলে ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত। প্রধান বিরোধী দল আরজেডি-র দাবি মেনে নীতিশ ইতিমধ্যেই বিহার জাত গণনার কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী পরশু এ নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকে রাজ্য বিজেপি যোগ দেবে কি না তা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। কারণ, নীতিশ এবং বিরোধী দলনেতা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব এক সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে গোটা দেশেই জাত গণনার দাবি জানিয়েছিলেন। ফলে জাত গণনা নিয়ে সরকারের বড় শরিক বিজেপির সঙ্গে তাঁর বিরোধ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
নয়া বিরোধের সূত্রপাত হল আরসিপি-কে রাজ্যসভায় টিকিট না দেওয়ায়। প্রাক্তন এই আমলা বর্তমানে মোদী সরকারের স্টিল মন্ত্রকের দায়িত্বে। বিহার থেকে বিজেপি এবার দু’জনকে রাজ্যসভায় পাঠাতে পারবে। দুই আসনেই তাঁরা প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। অন্য কোনও রাজ্য থেকে আরসিপি-কে প্রার্থী না করা হলে তাঁর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করা ছাড়া কোনও রাস্তা খোলা নেই। জুলাইয়ে রাষ্ট্রপতি ও উপ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে নীতিশের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে চাইছে না বিজেপি। ফলে আরসিপি-র এবার রাজ্যসভায় যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই আরসিপিকে টিকিট না দিয়ে নীতিশ আসলে বিজেপিকেও বার্তা দিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
উল্লেখ্য, আরসিপির সঙ্গে নীতিশের গোলমালের সূত্রপাত গত বছর জুলাইয়ে। ২০১৯-এ মোদী দ্বিতীয়বারের জন্য সরকার গড়ার সময় জনতাদল ইউনাইটেড থেকে মন্ত্রিসভায় মাত্র একজনকে নেওয়ার কথা বললে বেঁকে বসেন নীতিশ। প্রতিবাদে জনতা দল ইউনাইটেড কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়নি। কিন্তু গত বছর জুলাইয়ে মোদী মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করার সময় দেখা যায় জনতা দল ইউনাইটেডের সর্ব ভারতীয় সভাপতি আরসিপি মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিচ্ছেন। সেই ঘটনায় হতবাক নীতিশ শপথ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দেন, আরসিপি-কে দলের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হল। সেই থেকে দু’জনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিল তাই-ই শুধু নয়, ক্রমে নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপি শিবিরের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন আরসিপি।