রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কোথায় পৌঁছতে পারে প্রতিদিনই তার সাক্ষী থাকছে ‘আত্মনির্ভর ভারত’। এবার বীরত্বের জন্য পুলিশকে দেওয়া পদক থেকে সরছে ‘শের-ই-কাশ্মীর’ তথা উপত্যকার তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী শেখ মহম্মদ আবদুল্লার ছবি। যিনি জম্মু-কাশ্মীরের ভারতে অন্তর্ভুক্তির পিছনে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন। শেখ আবদুল্লার জায়গায় জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভের ছবি লাগানো হচ্ছে। জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানাজানি হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা তথা জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুখ আবদুল্লা। সংবাদমাধ্যমের কাছে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মোদী সরকার ও বিজেপি যতই চেষ্টা করুক না কেন, উপত্যকার মানুষের হৃদয়ে চিরদিন থাকবেন শেখ আবদুল্লা।’
জম্মু-কাশ্মীর সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য প্রতি বছরই পুলিশ কর্মীদের ‘শের-ই-কাশ্মীর’ পদকে ভূষিত করা হয়। এতদিন ওই পদকে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শেখ মহম্মদ আবদুল্লার ছবি ছিল। কাশ্মীরের মহারাজার নির্যাতনের হাত থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। এমনকী মহারাজা হরি সিংয়ের বিরুদ্ধে ‘কাশ্মীর ছোড়ো’ আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় হল, মুসলিম হলেও শেখ আবদুল্লার ওই আন্দোলনে এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স গঠনের ক্ষেত্রে বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের অধিকাংশই হিন্দু। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, কাশ্যপ বন্ধু, প্রেমনাথ বাজাজ, পণ্ডিত সুদামা সিধা। মহারাজা হরি সিংয়ের রাজত্ব হারানোর পরে জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বও পালন করেছিলেন শেখ আবদুল্লা। রাজ পরিবারের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামের জন্য উপত্যকার সাধারণ মানুষ তাঁকে ‘শের-ই-কাশ্মীর’ বলেই ভূষিত করেছিলেন।
পুলিশের পদক থেকে শেখ আবদুল্লার ছবি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ন্যাশনাল কনফারেন্সের মুখপাত্র ইমরান নবি দার সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত হঠকারী ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘পদক থেকে ছবি তুলে দিলেও কাশ্মীরের মানুষের মন থেকে শেখ আবদুল্লাকে মুছে দেওয়া যাবে না।’