এই তো সেদিনই জ্ঞানবাপী মসজিদ কর্তৃপক্ষ নিজেদের একাংশ জমি কাশী বিশ্বনাথ ধাম করিডর নির্মাণের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। তারপর দেখতে দেখতেই বছর ঘুরেছে। তবে এখন আদালতে দাবি উঠেছে, বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদের জমি কোনও দিনই ওয়াকফ সম্পত্তি ছিল না। কিন্তু এক বছর আগে কাশী বিশ্বনাথ ধাম করিডর তৈরির জন্য মন্দির ট্রাস্ট মসজিদের সামনের জমি পেতে উত্তরপ্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের সঙ্গেই চুক্তি করেছিল। জ্ঞানবাপী মসজিদ পরিচালন কমিটির সদস্যরা বলছেন, সম্প্রীতির বার্তা দিতেই তাঁরা মসজিদের সামনের কিছুটা জমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পরিকল্পিত কাশী বিশ্বনাথ ধাম করিডরের জন্য ছেড়ে দেন। তবে এক বছরের মধ্যে পুরো মসজিদটাই যে ছেড়ে দেওয়ার দাবি উঠবে, তা তাঁরা তখনও টের পাননি।
বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ পরিচালন কর্তৃপক্ষ আঞ্জুমা ইন্তেজামিয়া মসজিদ সূত্রের বক্তব্য, গত বছর উত্তরপ্রদেশ রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকে জ্ঞানবাপীর সামনের জমি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ আসে। মসজিদ কমিটির হাতে তিনটি জমির প্লট ছিল। একটি জমি, যার উপরে জ্ঞানবাপী মসজিদ রয়েছে। দ্বিতীয় জমিটি মন্দির ও মসজিদে যাওয়া-আসা করা পুণ্যার্থীরা ব্যবহার করেন। তৃতীয় জমিতে একটি পুলিশ কন্ট্রোল রুম ছিল। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য এটি তৈরি হয়। প্রশাসনের অনুরোধে ১৭০০ বর্গফুটের এই তৃতীয় জমিটি কাশী বিশ্বনাথ ধাম করিডর তৈরির জন্য ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মসজিদ কর্তৃপক্ষ। তার বিনিময়ে কিছুটা দূরে বাঁশফটকে ১০০০ বর্গফুটের জমিও দেওয়া হয় মসজিদ কর্তৃপক্ষকে।
জমির মাপ কম হলেও দুই জমিরই মূল্য এক। এ জন্য কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ট্রাস্টের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের চুক্তি হয়। গত বছর ৮ জুলাই জমির রেজিস্ট্রি হয়। তবে এক বছরের মধ্যেই পাল্টে গিয়েছে পরিস্থিতি। আদালতে দাবি উঠেছে, ১৬৬৯-এর ৯ এপ্রিল মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব নিজেই বারাণসীর আদি বিশ্বেশ্বর বা কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংসের ফরমান জারি করেছিলেন। যে জমিতে মসজিদ রয়েছে, তার মালিক আদি বিশ্বেশ্বর নিজেই। কোনও মুসলিম দাতা বা ওয়াকিফ জমি দান করলে, সেই ওয়াকফ সম্পত্তির উপরেই মসজিদ তৈরি হতে পারে। ওই জমি কোনও দিনই ওয়াকফ সম্পত্তি বলে চিহ্নিত ছিল না। তবে স্মরণাতীত কাল থেকে বা অন্তত গত ৫০০ বছর ধরে মুসলিমরাই ওই মসজিদে নমাজ পড়ে আসছে বলে আদালতে যুক্তি দিয়েছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ।