পাট শিল্প নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সরাসরি কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের বিরুদ্ধে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথভাবে আন্দোলনে নামার বার্তাও দিয়েছিলেন। তা থেকেই তৈরি হয়েছিল তাঁর ঘর ওয়াপসির জল্পনা। অবশেষে জল্পনার অবসান ঘটিয়ে রবিবার তৃণমূলের ফিরলেন বারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং। গতকাল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে ঘটা এই ঘটনাটিকে এককথায় তৃণমূলের মাস্টারস্ট্রোকই বলা যায়। কারণ অর্জুনের
তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের ঘোষণায় বঙ্গ বিজেপি যে আরও ব্যাকফুটে গেল তা-ই নয়, সামগ্রিক বিরোধী শিবিরকেই চাপে ফেলে চাঙ্গা হয়ে গেল তৃণমূল শিবির। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতিতে এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সক্রিয়তায় গতকালের অর্জুনপর্ব তৃণমূলের সাংগঠনিক দক্ষতারও পরিচয় দিল।
প্রসঙ্গত, যে সময় শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত বিতর্কে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা রোজ গলা ফাটাচ্ছেন, ঠিক সেই সময় অর্জুনের মতো বিজেপির ডাকসাইটে সাংসদকে ঘরে ফিরিয়ে আলোচনার অভিমুখ ঘোরালো তৃণমূল। যাবতীয় তৃণমূল বিরোধী খবর ও জল্পনার মধ্যে একদম ১৮০ ডিগ্রি বিপরীতমুখী তাস খেলে দিল। তৃণমূল বারবার বলছে তাদের ৯৯ শতাংশ কাজ ভাল। এক শতাংশেরও কম কাজে ভুল হয়েছে। ভুল বা অন্যায় হলে সংশোধন হবে। অন্যদিকে বিরোধীরা এই ভুল বা অন্যায়কে হাতিয়ার করেই হাঁকডাক করছিলেন। এদিনের পর মানুষ আগের ধারণাতেই থাকবেন, এইসব বিরোধীদের দিয়ে কিস্যু হবে না। কাজ তৃণমূল করবে। ভুল সংশোধনও তারাই করবে। বিরোধীদের গুরুত্ব দেওয়াটাই ভুল।
অন্যদিকে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক যখন কৌশলগত কারণে অর্জুনকে নিচ্ছেন, দলের বাকি নেতারা মানতেন। কিন্তু রবিবার যে পদ্ধতি অভিষেক দেখালেন, তা সংযত এবং গভীর পরিকল্পনাপ্রসূত। অর্জুন বিজেপিতে যাওয়ার পর যে নেতারা ওই এলাকায় লড়েছেন, তৃণমূলকে আবার সাফল্য দিয়েছেন, গতকাল অভিষেক তাঁদের সম্মান দিলেন। তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করলেন। তাঁদের মধ্যে অর্জুনকে এনে তিক্ততা ভোলানোর সমন্বয় বৈঠক করলেন। সবশেষে ওই নেতাদের দিয়েই অর্জুন-সহ সাংবাদিক বৈঠক করালেন। নিজে থেকে গেলেন শুধু টুইটে, ছবিতে। যাঁদের মিলেমিশে কাজ করতে হবে, দক্ষ সংগঠকের মতো বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে তাঁদেরই সামনে এগিয়ে দিলেন। যা একেবারেই সঠিক পদক্ষেপ।
শুধু তাই নয়। অর্জুনকে ফেরানোর প্রশ্নেও অন্তত প্রথম দিন একটি ব্যারিকেড রাখল তৃণমূল। সর্বোচ্চ নেত্রীকে প্রথম দিন দেখা গেল না। আবার দলের দু’নম্বর অভিষেক সবটা করলেও নিজে সরাসরি এলেন না সামনে। এমনকী হাতে পতাকা নেওয়ার ছবিও দেখা গেল না। মনে করা হচ্ছে, এটা পরিকল্পিত সুচারু কৌশল, যা ভবিষ্যতে লোকসভার স্পিকারের কোনও সম্ভাব্য চিঠির সম্ভাব্য উত্তরের সম্ভাব্য উপাদান হিসাবে তোলা থাকল। উল্লেখ্য, গতবার লোকসভায় অর্জুন জিতলেও এলাকায় বিধানসভা, পুরসভায় তৃণমূলের রমরমা। তাই তাঁকে ছাড়াও হয়তো এলাকা থাকত তৃণমূলের, কিন্তু অর্জুন আসায় বিজেপি কর্মীদের মনোবল ভাঙবে সারা রাজ্যে। বিজেপির বহু পদে, বহু দায়িত্বে ছিলেন বাহুবলী হেভিওয়েট অর্জুন। তাঁর মুখে বিজেপির সমালোচনা, ফেসবুকের পার্টি, এসি ঘরে বসে রাজনীতির পার্টির মতো মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই বিজেপিকে বেআব্রু করে দেবে।