পাট শিল্প নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সরাসরি কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের বিরুদ্ধে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথভাবে আন্দোলনে নামার বার্তাও দিয়েছিলেন। তা থেকেই তৈরি হয়েছিল তাঁর ঘর ওয়াপসির জল্পনা। অবশেষে জল্পনার অবসান ঘটিয়ে রবিবার তৃণমূলের ফিরলেন বারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং। গতকাল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে ঘটা এই ঘটনাটিকে এককথায় তৃণমূলের মাস্টারস্ট্রোকই বলা যায়। কারণ অর্জুনের
তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের ঘোষণায় বঙ্গ বিজেপি যে আরও ব্যাকফুটে গেল তা-ই নয়, সামগ্রিক বিরোধী শিবিরকেই চাপে ফেলে চাঙ্গা হয়ে গেল তৃণমূল শিবির।
প্রসঙ্গত, বারাকপুর লোকসভায় শিল্পাঞ্চলের সাত বিধানসভায় ২০১৯ সালে বিধানসভা ভিত্তিক ফল বিশ্লেষণে বিজেপি এগিয়ে ছিল ৫-২ ফলে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেল ৬-১ আসনে পিছিয়ে গিয়েছে তারা। শতাংশের বিচারে পদ্ম ফুল শিবিরের ভোট কমেছে অনেকটাই। রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, তৃণমূল বিভিন্ন বিধানসভা ভিত্তিক যে শক্তপোক্ত সংগঠন তৈরি করেছে তাতে ২০২৪-এর ভোটে বিজেপির রাজনৈতিক চাপ আরও বাড়তে চলেছে। আর সে কারণেই রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে ফেললেন অর্জুন। পরিসংখ্যান দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বলছে শতাংশের বিচারে ভোট বেড়েছে তাদের অনেকটাই।
বারাকপুর বিধানসভায় ২০১৯ সালের ভোটে তৃণমূল পেয়েছিল ৬০৫২৭ ভোট। শতাংশের বিচারে ৪১.২%। বিজেপি পেয়েছিল ৬৪০৪৬ ভোট। শতাংশের বিচারে যা প্রায় ৪৩.৬% ভোট ৷ ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস শতাংশের বিচারে সেখানে এগিয়ে যায় ৪৬% ভোটে। তৃণমূল পায় ৬৮৮৮৭ ভোট। বিজেপির ভোট আরও কমে হয় ৫৯৬৬৫ অর্থাৎ ৪০% ভোট। নোয়াপাড়া বিধানসভা আসনে ২০১৯ সালে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। তারা পেয়েছিল ৭৮৯৫৭ ভোট। ২০২১ সালে সেই ভোট শতাংশ বেড়ে হয় ৪৯% যা ৯৪২০৩ ভোট। নোয়াপাড়ায় বিজেপি পেয়েছিল ২০১৯ সালে ৭৮৪৩১ অর্থাৎ ৪১.২%। ২০২১ সালে তা কমে যায় ৩৫% বা ৬৭৪৯৩ ভোট।
জগদ্দল বিধানসভা আসনকে কার্যত বলা হয় অর্জুনের গড়। ২০১৯ সালে এখানে বিজেপি পায় ৭৭৭৩৩ ভোট যা শতাংশের বিচারে ৪৫.১%। তৃণমূল সেখানে পেয়েছিল ৬৯৩৬৯ ভোট যা ৪০.৩%। ২০২১ সালে ফল বদলে তৃণমূল পায় ৪৮% ভোট যা ৮৭০৩০ ভোট। বিজেপির ভোট শতাংশ কমে হয় ৬৮৬৬৬ যা ৩৮% ভোট। একমাত্র ভাটপাড়া আসন ধরে রাখতে পেরেছে বিজেপি। যদিও বাবার পথ ধরে তৃণমূলে ফিরছেন বিজেপি বিধায়ক। ২০১৯ সালে বিজেপি পেয়েছিল এই আসনে ৬৪৬৮০ ভোট। অর্থাৎ ৬০.৩%। তৃণমূল পায় ৩৪৯৭৩ ভোট। যা শতাংশের বিচারে ৩২.৬%। একুশের বিধানসভায় তৃণমূল এই আসন হারলেও ভোট বাড়ে ১১%, বিজেপির ভোট কমে যায় প্রায় ৭%। যার ফলে তৃণমূল পায় ৪৩৫৫৭ ভোট, বিজেপি পায় ৫৭২৪৪ ভোট।
বীজপুর বিধানসভায় বিজেপি লোকসভায় ভোট পেয়েছিল ৪৫.৩% যা ৫৮৯১২, তৃণমূল কংগ্রেস পায় ৩৯.২% যা ৫১০১৬ ভোট। বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের ভোট বাড়ে ৯%, যার ফলে জোড়া ফুল শিবির পায় ৬৬৬২৫ ভোট। পদ্ম শিবিরের ভোট কমে হয় ৭.৩%, প্রাপ্ত ভোট হয় ৫৩২৭৮। নৈহাটি বিধানসভা আসনে লোকসভায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় ৷ তৃণমূল পায় ৬৪৩৭৫ বা ৪৩.১% ভোট। বিজেপি পায় ৬৫৬০১ বা ৪৩.৯% ভোট৷ বিধানসভায় তৃণমূল সেখানে এগিয়ে যায় বহু ভোটে। তারা ৫০% ভোট পেয়ে যায় যা সংখ্যার বিচারে ৭৭৭৫৩ ভোট। বিজেপি পায় সংখ্যার বিচারে ৫৩২৭৮ ভোট যা ৩৮%। আবার আমডাঙা বিধানসভা আসন বরাবরই তৃণমূল প্রাধান্য পেয়েছে। লোকসভায় তৃণমূল এই আসনে পেয়েছিল ৯৮৬৫৩ ভোট(৫০.৩%)। এবং বিধানসভায় পেয়েছিল ৮৮৯৩৫ ভোট।