ফের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার। রাজ্যের আমজনতাকে ফের প্রবল সংকটের মুখে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠল যোগী আদিত্যনাথের সরকারের বিরুদ্ধে। বিনামূল্যের রেশন দূর অস্ত। ঢালাও রেশন কার্ড বাতিলের ঘোষণা করল সে রাজ্যের সরকার। ভোটের মুখে দফায় দফায় দেশজুড়ে বিনামূল্যে রেশনের ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উত্তরপ্রদেশের জন্য আলাদা করে রেশনে ঢালাও প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। কিন্তু কোথায় তার বাস্তবায়ন? ভোট মিটতেই সব বিলকুল ভোঁ-ভাঁ। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই জনসাধারণের মধ্যে তৈরি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ। শনিবার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যাতে লখনউয়ের কাছে বারাবাঁকিতে এক যুবককে ঢালাও রেশন কার্ড বাতিলের ঘোষণা করতে শোনা যাচ্ছে। ‘অপাত্র’ কেউ রেশনে চাল-গম তুলছেন জানা গেলে কড়া আইনি ব্যবস্থা হবে। সঙ্গে ওই গ্রাহক যেদিন থেকে রেশন নিচ্ছেন সেদিন থেকে স্থানীয় বাজারমূল্যে চাল ও গমের দাম উশুল করা হবে। ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসতেই তুমুল বিতর্ক ছড়িয়েছে।
উক্ত ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি ‘এখন খবর’। তবে কে, বা কারা ‘অপাত্র’, তা যাচাই না করেই স্রেফ ঢালাও কার্ড বাতিলের ঘোষণার অর্থ কী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ক্রাইটেরিয়া হিসাবে গাড়ি বা ট্রাক্টর রয়েছে, শহরে ফ্ল্যাট রয়েছে, অনাবাসী ভারতীয়, সরকারি চাকরিতে কর্মরত এসবকে সামনে রাখা হয়েছে। যদিও জানা গিয়েছে, সেই ক্রাইটেরিয়া যাচাইয়ের সরকারি কোনও প্রক্রিয়াই এখনও চালু হয়নি। যোগীরাজ্যে রেশনে দেওয়া চাল ও গমের দাম ৩২ টাকা ও ২৪ টাকা। সরকারি ফরমান অনুযায়ী, সেই মূল্য ধরে রেশন কার্ড ব্যবহারের সময় থেকে টাকা ফেরত দিতে হলে তার অঙ্ক কার্যত বিরাট। ফলত ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আমজনতার মধ্যে। শোনা যাচ্ছে, এই তালিকার বাইরেও স্রেফ আতঙ্কের বশে রেশন কার্ড সারেন্ডার করে দিতে চাইছেন গ্রাহকরা। গত এক সপ্তাহে জমা পড়েছে এক লক্ষ কার্ড। ঘটনার জেরে সরব সে রাজ্যেরই বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধী। “ভোটের আগে পাত্র, আর ভোট মিটতেই অপাত্র? স্রেফ ভোটের নিরিখে মানুষের জীবনের বিচার করলে সরকার তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। এভাবে পরের নির্বাচন আসতে আসতে কোটি কোটি গ্রাহক তাঁদের কার্ড হারাবেন”, বলেছেন তিনি।
পাশাপাশি, তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলার খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষও। বলছেন, “এটা কোনও সরকারের নীতি হতে পারে না। বাংলায় ছয় কোটি দুই লক্ষ গ্রাহক এনএফএসএ-র আওতায় রেশন পান। বাকি চার কোটি মানুষকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিনামূল্যে রেশন দেন। এটা স্পষ্ট যে, উত্তরপ্রদেশ সরকার নির্বাচনের মুখে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা তারা রাখল না।” তাঁর সংযোজন, “এ রাজ্যে কোনও গ্রাহক মারা গেলে বা জোড়া রেশন কার্ড হয়ে থাকলে সেইসব কার্ডকে শুধু নিষ্ক্রিয় করা হয় মাত্র। আমরা কিন্তু বাতিল করি না।” একইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, “কোন প্রক্রিয়ায় কার্ডগুলোকে যাচাই করা হচ্ছে? এখানেই বাংলার সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যের ফারাক। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর ওখানে যোগী।”
উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশের জনসংখ্যা এখন ২৩ কোটির কাছাকাছি। তার মধ্যে রেশন গ্রাহকের সংখ্যা ১৫ কোটি। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন বা এনএফএসএ-র আওতাভুক্ত গ্রাহকরাই সেখানে রেশনে চাল আর গম পান। বাংলার মতো সে রাজ্যের সরকার কার্ডহীন কোনও ব্যক্তিকে কিছু দেয় না। অন্ত্যোদয় কার্ডপিছু সে রাজ্যে প্রতি মাসে দেওয়া হয় ১৫ কিলো চাল ও ২০ কিলো গম। পিএইচএইচ কার্ডে একটি পরিবারে মাথাপিছু মেলে তিন কিলো গম আর দুই কিলো চাল। কখনও সখনও পাম তেল। সে রাজ্যে ভোটের মুখে তিন মাসের জন্য এক কিলো করে ছোলা আর নুন দেওয়া হয়েছিল। ভোট মিটতে সে সবকিছুতেই দাঁড়ি পড়তে চলেছে। তার মধ্যেই এমন দুশ্চিন্তার ফরমান। ভাইরাল ওই ভিডিওটিতে যুবককে বলতে শোনা গিয়েছে, ১৫ই মে’র মধ্যে গ্রাহকদের রেশন কার্ড বারাবাঁকিতে গিয়ে নির্দিষ্ট সরকারি দপ্তরে জমা দিতে হবে। অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলারস ফেডারেশনের অন্যতম জাতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা উত্তরপ্রদেশের কার্যকরী সমিতির সভাপতি গিরিশ তিওয়ারি জানিয়েছেন, “রেশন কার্ড জমা দেওয়ার জন্য ৩০শে মে পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে কার্ড জমা না দিলে সরকার আইনি পথে হাঁটবে।” অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় বিনামূল্যের রেশন বন্ধ করে দেওয়ার পথে হাঁটতে পারে বলে ইতিমধ্যে শাসানি দিয়ে রেখেছে মোদী সরকার। কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে গমের পরিমাণও। যথারীতি বিপাকে জনগণ। মাথাচাড়া দিয়েছে অসন্তোষ।