গেরুয়া শিবিরের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব কুখ্যাত। দলের ভিতর ভিতর ঝগড়া অশান্তি কোন্দল লেগেই রয়েছে। এই সমস্ত কিছুতে জেরবার বঙ্গ বিজেপি। এবং তাতে ফাটল ধরছে আরও। আবারও একবার উঠে এল তেমনই ঘটনা। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের আট বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশজুড়ে প্রচারাভিযানের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিজেপি। বাংলায় সেই কর্মসূচি রূপায়ণে কেন্দ্রীয় বিজেপির তরফে মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের উপরে। লকেটের নেতৃত্বে তাঁরই ঠিক করা মোট চার সদস্যের কমিটি আগামী ৩০ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত বাংলাজুড়ে সেবা, সুশাসন, সাফল্য, গরিব কল্যাণের উপর বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। তবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার বঙ্গ বিজেপির বর্তমান পরিস্থিতিতে এই কর্মসূচি কতটা সফল হবে, তা নিয়ে খোদ লকেটই সন্দিহান।
লকেটকে এই কর্মসূচি পালনের মধ্যে দিয়ে দলের পুরনো নেতা-কর্মীদের দলের কাজে যুক্ত করা, বিজেপির যে সমস্ত কর্মী-সদস্য বসে গিয়েছেন তাঁদের উজ্জীবিত করার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়েও ক্ষমতাসীন শিবিরের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। উত্তরাখণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনে সহ-পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর থেকেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে লকেটের কদর বেড়েছে। যদিও সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষের রাজ্য সফরে লকেট সেভাবে পাত্তা পাননি। যা নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন বলেই জানা যায়।
সূত্রের খবর অনুযায়ী লকেটের মুখে বারবারই বিজেপির পুরনো নেতা, কর্মীদের কাজে লাগানোর কথা শোনা গিয়েছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলে কাজ শুরু করার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন লকেট। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীদের সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠকও সেরেছেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকের দিন ঠিক করেছেন। নিজে দিল্লী থেকে ট্রেনে ফেরার সময় জেলা সফর করবেন বলেও ঠিক করেছেন। তবে এতবড় দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও তিনি আগামী আরও দু’দিন দিল্লীতেই থাকবেন এবং কর্মসূচি চলাকালীন সংসদের তথ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ঠিক করা লাদাখ ট্যুরে অংশ নেবেন।
প্রসঙ্গত, লকেটকে মোদি সরকারের আট বছর পালনের কর্মসূচিতে বাংলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিজেপি ভারসাম্য রাখতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাতে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে গোল আরও বেড়েছে। লকেট অবশ্য এই কমর্সূচি সফল হবে বলেই আশা প্রকাশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “আপনাদের মনে হতে পারে বঙ্গ বিজেপির অবস্থা ভালো নয়। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, আমরা ২ কোটি ২৮ লক্ষ ভোট পেয়েছিলাম। আমাদের কর্মীরা কেউ কাজে রয়েছেন, কেউ নেই। যাঁরা নেই তাঁদের কাজে লাগাতে হবে। অনেকেই পদে নেই বলে দূরে সরে রয়েছেন। তাঁদেরও সুযোগ দেওয়া হবে। যারা বহু বছর ধরে বিজেপিতে রয়েছে তারা পাশে থাকলে সাফল্য আসবেই।” এতকিছুর পরেও লকেটকে এই কর্মসূচির দায়িত্ব দেওয়া মোটেই ভালো চোখে দেখছে না বঙ্গ বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবির। ফলে ক্রমেই বাড়ছে কোন্দল।