ইদানিং চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই দ্রুত অগ্রগতি বিষ্ময় তৈরি করে। কত শত অসাধ্য সাধন করছেন ডাক্তারবাবুরা। বহু জটিল রোগ সারিয়ে তুলছেন রোজ। প্রাণ ফিরিয়ে দিচ্ছেন হাজারও মানুষের। ঠিক তেমনই আরও একবার নজির গড়ে তাক লাগালেন নবদ্বীপের চিকিৎসকরা। মেরুদণ্ডের নীচে সংক্রমণ জটিল আকার নিচ্ছিল দিন দিন। পায়ুদ্বারের উপরে প্রায়ই জমে যাচ্ছিল পুঁজ, রক্ত। অসহ্য যন্ত্রণায় দিনভর যন্ত্রণায় ছটফট উঠতেন যুবক, নিজের একরত্তি মেয়েকে কোলেও নিতে পারতেন না। হাঁটতে পারতেন না সোজা হয়ে। সেই সংক্রমিত মেরুদণ্ডেই জটিল অস্ত্রোপচার করে তাক লাগিয়ে দিলেন নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক। নতুন জীবন ফিরে পেলেন নদিয়ার সৌরভ সরকার।
জানা গেছে, সৌরভের মেরুদণ্ডে যে অপারেশনটি হয়েছে তার নাম পাইলোনিডাল সাইনাস এক্সসিশন উইথ লিমবার্গ ফ্ল্যাপ। এতে যেখান থেকে সংক্রমণ ছড়াচ্ছিল, মেরুদণ্ডের সেই অংশ কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। তারপর নিতম্ব থেকে মাংসপেশি তুলে এনে সেই ফাঁকা অংশে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক বকুলচাঁদ শেখ। সফল এই অস্ত্রোপচারের পর এখন ফের সোজা হয়ে হাঁটতে পারছেন সৌরভ। সৌরভ পেশায় মোটর সারাই কর্মী। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয় একেবারেই। তাঁর পক্ষে এই জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন টাকা দিয়ে করানো একেবারেই সম্ভব ছিল না। নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে এই অপারেশন হয়েছে বিনামূল্যে। সৌরভকে এক পয়সাও খরচ করতে হয়নি।
এমন অপারেশন কেবল মেডিকেল কলেজ এবং বড় বড় হাসপাতালগুলিতেই সম্ভব। কিন্তু ছোট হাসপাতালে সফল সেই অস্ত্রোপচার করে তাই তাক লাগিয়ে দিয়েছে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। বছর দুয়েক ধরেই জটিল পাইলোনিডাল সাইনাস রোগে ভুগছিলেন সৌরভ। মাত্র ২৫ বছর বয়স তাঁর। কিন্তু এই বয়সেই মেরদণ্ডের নীচের দিকে স্যাক্রো ককসিজিয়াল অংশে এমন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল যে সোজা হয়ে হাঁটতেই পারতেন না সৌরভ, কষ্ট হত চলাফেরায়। ঔষুধ খেলে সাময়িক স্বস্তি মিললেও আবার যেই কে সেই। এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণ আর বাড়তে না দিয়ে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন চিকিৎসকরা। এবং তাতে সফলও হন। ডাক্তারবাবুদের এমন কীর্তিতে আপ্লুত সৌরভ ও তাঁর পরিবারের লোকজনও।