বাস্তবায়িত হল মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন। বাংলায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই স্কুলছুট রুখতে বিশেষ নজর দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই স্কুলছুট রুখতে গিয়েই রাজ্য সরকারের নজরে এসেছিল যে, জেলায় জেলায় গ্রামীণ এলাকায় পড়ুয়াদের বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব বেশি হওয়ার জন্য ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকায় অনেকেই স্কুলড্রপ করছে। সেই স্কুলছুটদের মধ্যে আবার একটা বড় সংখ্যা ছিল মেয়েদের। এই সমস্যার সমাধান করতেই মুখ্যমন্ত্রী কার্যত যুগান্তরকারী দুটি পদক্ষেপ নেন। একটি ছিল সব স্কুল পড়ুয়াদের জন্য ‘সবুজসাথী’ প্রকল্প চালু করে তাদের সাইকেল প্রদান করা এবং ছাত্রীদের জন্য ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প চালু করা। দেখা যাচ্ছে, করোনাকালের আগে পর্যন্ত প্রতি বছর রাজ্য সরকারকে প্রায় ১০ লক্ষ সাইকেল বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে কিনতে হত। কিন্তু সেই সাইকেল তৈরি হত ভিন রাজ্যে। মুখ্যমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরেই চাইছিলেন, এই সাইকেল গড়ার কারখানা তৈরি হোক এই রাজ্যে। সেই স্বপ্ন এবার রূপায়ণের মুখে। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুরে বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকে সাইকেল তৈরির কারখানা গড়ে তোলার কথা ঘোষিত হল মঙ্গলবার।
প্রসঙ্গত, জঙ্গলমহল সফরে এদিন মেদিনীপুর টাউনে এক প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই প্রশাসনিক বৈঠক থেকেই বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকে ৫ জন শিল্পপতির হাতে মোট ৩০ একর জমি তুলে দেওয়া হয় সাইকেল তৈরির কারখানা নির্মাণ করার জন্য। ওই ৫ জন শিল্পপতির মধ্যে এদিন অবশ্য বৈঠকে ৪ জন উপস্থিত ছিলেন। এরা হলেন অজয় ঘোষ, নারায়ণ অগ্রবাল, সুবীর ঘোষ ও জয় বার্ডিয়া। এই সাইকেল কারখানায় মোট ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে ও রাজ্য সরকার এই সংস্থা থেকে প্রতি বছর ৯ লক্ষ সাইকেল কিনবে। তারপর যত সাইকেল থেকে যাবে তা রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হবে। এই সাইকেল কারখানা তৈরি হওয়ার পরে প্রায় ৫ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ভাবে চাকরি পাবেন। কারখানা পুরোদমে চালু হলে বছরে ১১ লক্ষ সাইকেল তৈরি করা হবে। এদিনের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনকে কড়া নজর রাখতে বলেছেন, যাতে এই শিল্পপতিদের কোনওরকম জুলুমবাজির মুখে পড়তে না হয়। শিল্পপতিরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, তাঁরা ভবিষ্যতে খড়গপুরে একটি সাইকেল হাব গড়ে তুলতে চান। পাশাপাশি শিল্পপতিদের দাবি, সাইকেল তৈরি করতে যে সব পার্টস লাগে সেই সব পার্টস তৈরির আলাদা আলাদা কারখানা আছে। খড়গপুরে সাইকেল তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হলে তার পাশাপাশি আরও অনুসারী শিল্পও গড়ে উঠবে। যা এলাকায় আরও বেশি করে কর্মসংস্থান তৈরি করবে। এমনকী খড়গপুরে তৈরি সাইকেল বিদেশেও রফতানি করতে চান তাঁরা। যা শুনে স্বাভাবিকভাবেই খুশি মমতা।
