সমস্ত জল্পনায় জল ঢেলে দিয়ে গত মাসের শেষেই প্রশান্ত কিশোর জানিয়ে দিয়েছিলেন, কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন না তিনি। টুইট করে ভোটকুশলী জানিয়েছিলেন, যে তাঁদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। তবে পিকে দলে যোগ না দিলেও এবার পরামর্শ মেনেই সংগঠনের হাল ফেরানোর পথ খুঁজল কংগ্রেস। দলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের জি-২৩ গোষ্ঠীর দাবি ছিল, কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বকে সক্রিয় হতে হবে। সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তার জন্য নতুন করে কংগ্রেসের সংসদীয় বোর্ড গঠন করতে হবে। কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের সাংগঠনিক নির্বাচনে জিতে আসতে হবে। রবিবার চিন্তন শিবিরের শেষে সোনিয়া গান্ধী যে সব নতুন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন, তাতে জি-২৩-র দাবির বদলে পিকের পরামর্শ বেশি প্রতিফলিত হল। সংসদীয় বোর্ড তৈরির বদলে গতকাল সোনিয়া জানিয়েছেন, কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে একটি উপদেষ্টা গোষ্ঠী তৈরি হবে। কংগ্রেস সভানেত্রীর নেতৃত্বে সেই কমিটি নিয়মিত রাজনৈতিক বিষয় ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনায় বসবে। কিশোরের পরামর্শে প্রায় একই কথা বলা হয়েছিল৷ সোনিয়া অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন, জি-২৩-র দাবি মতো সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এই উপদেষ্টা গোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে না।
পিকে তাঁর পরামর্শে সবথেকে যে দিকে জোর দিয়েছিলেন, আজ রাহুল গান্ধীও সেই কংগ্রেসের প্রচার ও জনসংযোগ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোয় সব থেকে বেশি জোর দিয়েছেন। দলের বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বিজেপি যে কংগ্রেসের থেকে অনেক এগিয়ে, তা মেনে নিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হল, মানুষ কী চান, কী বলছেন, তা বোঝা। দ্বিতীয় পদক্ষেপ হল, কংগ্রেসের প্রকৃতি, কাজের ধরণ বদলানো। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ এমন একটা দিক, যেখানে আমাদের বিরোধীরা আমাদের ছাপিয়ে যায়। তাদের অর্থ বেশি, যোগাযোগ বেশি। আমাদের এ ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন। নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রয়োজন।’ তরুণদের দায়িত্ব দিলে যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত হবে বলে মত রাহুলের। তরুণ প্রজন্মকে তুলে আনতে সংগঠনের সব স্তরে ৫০ শতাংশ পদে ৫০ বছরের কমবয়সিদের প্রার্থী করার পাশাপাশি ২০২৪-এর নির্বাচন থেকে শুরু করে তার পরে লোকসভা, বিধানসভা নির্বাচনেও ৫০ শতাংশ আসনে ৫০ বছরের কমবয়সিদের প্রার্থী করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংগঠন ও প্রার্থী তালিকায় দলিত, সংখ্যালঘু, আদিবাসী এবং মহিলাদের যুক্তিসঙ্গত প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
চিন্তন শিবিরে ঠিক হয়েছে, এআইসিসিতে নির্বাচন পরিচালনায় সারা বছর ধরে কাজের জন্য পৃথক বিভাগ তৈরি হবে। কারণ বিজেপির নির্বাচন পরিচালনায় যে পেশাদারিত্ব থাকে, কংগ্রেসে তা দেখা যায় না। এখন কংগ্রেসের নির্বাচনী কমিটি প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করে। রাহুল গান্ধীর আমলে কোণঠাসা হয়ে পড়া কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতারা চাইছিলেন, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তাঁদের মতামতকেও গুরুত্ব দেওয়া হোক। তাই তাঁরা সংসদীয় বোর্ড ফেরানোর দাবি তুলেছিলেন। সংগঠনের হাল ফেরাতে চিন্তন শিবিরে কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ব্লক কংগ্রেস কমিটির নীচে মণ্ডল কমিটি গঠন করা হবে। দলের কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য জাতীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হবে। কেরলের ‘রাজীব গান্ধী ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’ থেকে তার সূত্রপাত হবে। কর্পোরেট ধাঁচে জনতার মন বুঝতে জনসমীক্ষার জন্য ‘পাবলিক ইনসাইট’ শাখা, পদাধিকারীদের কাজের মূল্যায়নে ‘অ্যাসেসমেন্ট’ বিভাগ তৈরি হবে। তার ভিত্তিতেই নেতাদের পদোন্নতি, পদচ্যুত করা হবে। এআইসিসি ও প্রদেশ স্তরে রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটি গঠন হবে। সবমিলিয়ে দেখা গেল পিকের পরামর্শেই সিলমোহর দিল হাত শিবির।