ভূস্বর্গে শুরু তোলপাড়। শনিবার হঠাৎই কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ডঃ আলতাফ হোসেন পণ্ডিতকে বরখাস্ত করার নির্দেশ জারি করেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা। স্বাভাবিকভাবেই এই সিদ্ধান্তে শোরগোল পড়ে গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। এমনকী দেশের শিক্ষা মহলেও চলছে জোর সমালোচনা। সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, আলতাফ হোসেন পন্ডিত দেশের বিভিন্ন বিভিন্ন ঊনিরাপত্তার পক্ষে একজন বিপজ্জনক ব্যক্তি। কিন্তু তাঁর ছাত্র-ছাত্রী, সহকর্মী এবং পরিচিতজনেরা লেফটেন্যান্ট গভর্নরের এই নির্দেশের আপত্তি তুলেছেন। প্রায় ১০০ জন লিখিত আর্জি জানিয়ে লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে বলেছেন তাঁর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিতে। তাৎপর্যপূর্ণ হল শনিবার ওই অধ্যাপককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার আগে তাঁকে অপরাধের কথা জানিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়নি। এমনকী বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকারের তরফে তাঁকে নিয়ে কোনও তদন্ত কমিটি গঠনেরও খবর ছিল না। জানা যাচ্ছে যে, এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনাধীনে থাকা জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসন যে আইন দ্বারা চালিত হচ্ছে তার একটি ধারাতে প্রশাসনকে ক্ষমতা দেওয়া আছে, রাষ্ট্রের পক্ষে বিপজ্জনক কোনও ব্যক্তি সম্পর্কে তারা কোনও কারণ দর্শানো ছাড়াই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
পাশাপাশি, ডঃ পণ্ডিতের বিরুদ্ধে কী ধরনের অভিযোগ রয়েছে তা নিয়েও আছে বিরাট বিতর্ক। সরকারিভাবে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন প্রকাশ্যে এই বরখাস্তের কোন কারণ জানাচ্ছে না। তবে পুলিশ জানাচ্ছে যে প্রায় তিন দশক আগে ১৯৯০-৯১ নাগাদ ওই অধ্যাপক পাকিস্তান গিয়েছিলেন বলে কিছু তথ্য তাদের হাতে এসেছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালিয়ে তারা জানতে পেরেছেন যে তিনি পাকিস্তানে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন এবং দেশে ফেরার পর কাশ্মীরে উগ্রপন্থীদের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছিল। যদিও দীর্ঘদিন তাঁর আচার-আচরণ, কর্মপদ্ধতি, মেলামেশা কোনও কিছুর সঙ্গেই উগ্রপন্থী সংগঠন বা বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির কোনও যোগাযোগ প্রশাসনের সামনে আসেনি। বিজেপি সরকারের নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য গঠিত একটি সাব কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন ডঃ পণ্ডিত। এছাড়া রসায়ন সংক্রান্ত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে। দেশেও রসায়ন বিজ্ঞানে মহলে তাঁর বিরাট নামডাক। এছাড়াও ব্যক্তিগত সততা, আচরণ ইত্যাদির কারণেও অধ্যাপক আলতাফ হোসেন পণ্ডিত বিশ্ববিদ্যালয়ে খুবই জনপ্রিয়। দেশের বহু নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে রয়েছেন।