২০১৯-এর ৩১ আগস্টের কথা আজও ভুলতে পারেননি বউবাজারের বাসিন্দা থেকে কলকাতা মেট্রোরেল কর্পোরেশন লিমিটেডের কর্মীরা। ওই দিনই বউবাজারের ভূগর্ভে টানেল বোয়িং মেশিন সুড়ঙ্গ কাটার সময় মাটির ২২ মিটার গভীরে জমে থাকা জলস্তর ভেঙে পড়ে।
বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মাটি বসে গিয়ে দুর্গা পিথুরি লেন ও স্যাকরাপাড়া লেনের ৭৪টি বাড়ি হয় ধসে পড়ে অথবা বড় রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আড়াই বছর পর ফের একবার মেট্রোর কাজ চলাকালীন বউবাজার এলাকার কম বেশি একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরেছে। আর সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই নতুন করে বিপর্যয়।
আজ সোমবার বউবাজারে দুটি বাড়ি ভাঙবে কেএমআরসিএল। ফাটলের জেরে মোট তিনটি বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিন বছর আগে বউবাজারে মেট্রোর সুড়ঙ্গে বিপর্যয়ের সময় ২৩টি বাড়ি ভাঙা হয়েছিল। সেই সময় মোট ৩০টি বাড়ি নিজে থেকেই ভেঙে পড়ে। এবার বউবাজারে বাড়ি ভাঙার আগে সুরক্ষায় নজর দেওয়া হচ্ছে। পাশের বাড়ি ভাঙা পড়লে, যাতে অন্যান্য বাড়ি হেলে না পড়ে তাই সাপোর্টিং জ্যাক লাগানো শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই।
১৬ ও ১৬/১ দুটি বাড়ির ভাঙার কাজ শুরু হতে পারে। ইঞ্জিনিয়াররা প্রথমে এসে বাড়ি দুটি দেখবেন। প্রাথমিকভাবে আংশিক ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়ে এগনো হচ্ছে। প্রয়োজন পড়লে পুরো বাড়িটাও ভাঙা হতে পারে। প্রসঙ্গত, ওই এলাকার একাধিক বাড়িকে আগেই বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করেছিল কলকাতা পুরনিগম। ২০১৯ সালেও বেশ কয়েকটি বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে। কিন্তু তারপরও সেখানে বাস করেছিলেন অনেকে।
এবারে কলকাতা পুরনিগমও মেট্রোর কাজে সহায়তা করবে বলে আশ্বস্ত করেছে। আশপাশের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্যত্র। কোনও বিপর্যয় যদি ঘটে, তার জন্য আগে থেকেই তৈরি রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। যে বাড়িগুলি ভাঙা হবে, সেগুলির যাবতীয় আসবাবপত্র বাগবাজারের গোডাউনে নিয়ে যাওয়া হবে।
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র শুধু সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কেএমআরসিএলের বৈঠক হয়েছে ইতিমধ্যেই। ক্ষতিগ্রস্তদের সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।
তবুও মাথার ওপর ছাদ হারিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এক জন বললেন, “বিগত পাঁচ-ছ’দিন ধরে আমাদের যে কী অবস্থা, সেটা আমরাই জানি। গুরুতর সমস্যা। পৌরসভার লোকজনও আসছে। এদিকে আবার পাইপ ফেটেও আরেক বিপর্যয়। নিকাশি নালার জলও সেই পাইপ দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে। স্নান করা তো দূরের কথা। রান্নাবান্নাও বন্ধ। অন্যত্র যেতে হচ্ছে।”