মোদী সরকারের আমলে ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধিতে রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠেছে আমজনতার। মিলছে না স্বস্তি। গত কয়েক সপ্তাহে জ্বালানির দাম সেঞ্চুরি ছুঁয়েছে। রান্নার গ্যাসের দাম অতিক্রম করেছে হাজার টাকা। অন্যদিকে ডলারের নিরিখে টাকার পতন হয়েছে রেকর্ড হারে। ধস নেমেছে শেয়ার বাজারেও। দেশের অর্থনীতির এই বেহাল পরিস্থিতিতেও বারবার রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠছে ধর্ম-জাত, মন্দির-মসজিদ। এবার রাজনীতির এই চলতি অভিমুখ বদলাতে চায় কংগ্রেস। সূত্রের খবর, কংগ্রেসের তিন দিনের চিন্তন শিবিরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দেশের অর্থনীতির ভেঙে পড়া হালকেই এবার মূল লক্ষ্য করবে দল। এই ইস্যুতেই চেপে ধরা হবে দিল্লীর বিজেপি সরকারকে। সেই ইঙ্গিত দিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলিকে এতদিন উত্থাপন করতে না পারার ব্যর্থতাও স্বীকার করেছে কংগ্রেস।
গতকাল, অর্থাৎ শনিবার উদয়পুরের চিন্তন শিবিরের দ্বিতীয় দিনে দলের হয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে করেন চিদম্বরম। সেখানে তিনি মেনে নেন, মোদী সরকারের হাজারও ব্যর্থতার পরেও মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে দল। এইসঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা। তাঁর মতে দেশের অর্থনীতি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা রীতিমতো উদ্বেগের। সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা বলেন, গত আট বছর ধরেই দেশের আর্থিক বৃদ্ধি অত্যন্ত শ্লথ। অন্যদিকে কেন্দ্রের উদাসীনতায় মহামারী পরবর্তী সময়েও অর্থনীতিতে গতি আসেনি। বরং পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে উঠছে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে আর্থিক সম্পর্কের ব্যাপক পর্যালোচনার প্রয়োজন৷ চিদম্বরম মনে করেন, ২০১৭ সালে মোদী সরকারের আনা জিএসটি ছিল একটি অতি দুর্বল আইন। যা এখন সকলের কাছেই জলের মতো পরিষ্কার।
পাশাপশি, এদিন কংগ্রেস নেতা বলেন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার ১৯৯১ সালে উদারীকরণের মাধ্যমে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিল। যার ফলে দেশে প্রভূত সম্পদ সৃষ্টি হয়েছিল। নতুন উদ্যোগের জন্য ইতিবাচক আবহ তৈরি হয়েছিল। একটি বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণী তৈরি হয়েছিল। এছাড়াও লক্ষ লক্ষ চাকরি তৈরি হয়। রপ্তানি বাণিজ্য সুবিধাজনক অবস্থা অর্জন করেছিল ভারত। ১০ বছরের সময়কালের মধ্যে ২৭ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার উপরে উঠে এসেছিল। কংগ্রেস নেতার মতে, একদম বিপরীত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মোদী সরকারের আমলে। নয়া সরকারের অর্থনৈতিক নীতি সামাজিক বৈষম্য বাড়াচ্ছে। জনসংখ্যার ১০ শতাংশ মানুষ চরম দারিদ্রের শিকার। তথ্য দিয়ে চিদাম্বরম বলেন, গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে ১১৬টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান এখন ১০১। পুষ্টির ঘাটতিতে ভুগছে দেশের বিরাট অংশের শিশু ও নারী। চিদম্বরমের এদিনের কথায় স্পষ্ট, আগামী দিনে দেশের অর্থনীতি কংগ্রেসের কাছে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ইস্যু।