বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপত্যকায় খুন হয়েছেন ফের এক কাশ্মীরি পণ্ডিত। যা নিয়ে তোলপাড় ভূস্বর্গ। ৩৬ বছর বয়সী ওই সরকারি কর্মচারীকে খুনের প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই জোরদার বিক্ষোভ শুরু হয়েছে উপত্যকা জুড়ে। প্রসঙ্গত, ২০১০-এ কাশ্মীরি পণ্ডিতদের পুনর্বাসন প্রকল্পে বদগামের চাদুরার রাজস্ব দপ্তরে চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। অফিসের সকলের ব্যবহার খুব ভালো, তাই কখনও বিপদের আঁচ পাননি বছর ছত্রিশের রাহুল ভাট। কিন্তু ভূস্বর্গে একের পর এক কাশ্মীরি পণ্ডিতের খুন আশঙ্কা বাড়াচ্ছিল। শেখপুরার কাশ্মীরি পণ্ডিত কলোনিতে স্ত্রী ও পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে বাস আর নিরাপদ বোধ হচ্ছিল না রাহুলের। তাই জেলা সদরদপ্তরে বদলির জন্য অনেক দিন ধরেই আবেদন করছিলেন, কিন্তু সে আবেদন বিশেষ পাত্তা পায়নি।
স্ত্রী মীনাক্ষী বলেছিলেন চাকরি ছেড়ে জম্মু চলে যাওয়ার কথা, রাজি হননি রাহুল। সেটাই কি কাল হল? প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে রাহুলের খুন! বৃহস্পতিবার অফিসে ঢুকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে রাহুলকে খুন করে তিন জঙ্গি। আর তারপরেই, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিরাপত্তা কোথায়? শুধু পুনর্বাসন দিয়েই সরকারের দায় শেষ? এমনই সব প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রাহুল ভাটের স্ত্রী মীনাক্ষী। নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের দাবি তুলে শুক্রবার রাস্তায় নেমেছিলেন কাশ্মীরি পণ্ডিতরা। কাঁধ মেলালেন স্থানীয় মুসলিমরাও। জনরোষ সামলাতে কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিচার্জ করে পুলিশকে। যা দেখে প্রতিবাদীদের প্রশ্ন, ‘কাঁদানে গ্যাস, লাঠির জোরে প্রতিবাদ তো ছত্রভঙ্গ করে দিলে। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ, এতজন প্রত্যক্ষদর্শী থাকা সত্ত্বেও কেন ২৪ ঘণ্টা পরও অভিযুক্তদের ধরা গেল না?’
সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরে পরিযায়ী শ্রমিক, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের টার্গেটেড খুন বেড়েছে। এদিকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সরকারি চাকরি, জমি, বাড়ি দিয়ে কাশ্মীরে ফেরার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করছে সরকার। কিন্তু কোন ভরসায় ফিরবেন তাঁরা? রাহুলের মৃত্যু তুলে দিচ্ছে সেই প্রশ্নই। নিহত রাহুলের স্ত্রী মীনাক্ষীর কথায়, ‘ও বার বার বদলির জন্য আবেদন করেছিল, কিন্তু শুনলই না কেউ! বৃহস্পতিবার বিকেলে ওকে ফোন করেছিলাম, বলল বাড়ি ফিরছে। আর তার পাঁচ মিনিট পরেই এই খবর…প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তো কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বলির পাঁঠা বানাচ্ছেন। তাঁদের রাজনীতির জন্য আমাদের ব্যবহার করছেন। আপনাদের চ্যালেঞ্জ করছি, নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া কাশ্মীরে ঘুরে যান। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নির্বিচারে খুন করা হচ্ছে, আর পুরো দেশ চুপ করে আছে! কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিয়ে মোদী-শাহের তো কোনও মাথাব্যথাই নেই!’
জঙ্গিগোষ্ঠী ‘কাশ্মীর টাইগার্স’ রাহুলের খুনের দায় স্বীকার করেছে। কিন্তু এই খুনের পিছনে পরিচিত কারও হাত আছে বলে সন্দেহ রাহুলের স্ত্রী ও বাবার। মীনাক্ষীর কথায়, ‘নিশ্চয়ই অফিসের কিছু লোকের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগ ছিল। রাহুল বার বার বলত, অফিসের সকলের ব্যবহার খুব ভাল, কেউ কোনও ক্ষতি করবে না। কিন্তু জঙ্গিরা এসে যখন জানতে চাইল, রাহুল কে, ওরাই তো দেখিয়ে দিল! গুলি মেরে চলে গেল, কেউ আটকানোর চেষ্টাও করল না?’ রাহুলের স্ত্রী-কন্যা বদগামে থাকলেও বাবা-মা এবং পরিবারের বাকিরা থাকেন জম্মুর দুর্গানগরে। শুক্রবার সেখানেই সম্পন্ন হয়েছে রাহুলের শেষকৃত্য। রাহুলের বাবা বিটা ভাটের দাবি, তাঁর ছেলেকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। সেই খুনের যথাযথ তদন্ত হোক।