টাকার দামের পতন থেকে মুদ্রাস্ফীতির চড়া হার, বেকারত্ব বৃদ্ধি থেকে পেট্রপণ্যের আগুন দাম— সবমিলিয়ে ধরাশায়ী ভারতীয় অর্থনীতি। এ হেন পরিস্থিতিতে শনিবার উদয়পুরে কংগ্রেসের চিন্তন শিবির থেকে অর্থনীতিকে ‘রিসেট’ করার ডাক দিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম-সহ শীর্ষ কংগ্রেস নেতারা। ‘রিসেট’ বলতে আর্থিক নীতি পরিবর্তনের কথাই বোঝাতে চেয়েছেন তাঁরা।
চিন্তন শিবিরে শনিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে চিদম্বরম বলেন, ঘরোয়া অর্থনীতির অবস্থা ভয়ঙ্কর উদ্বেগজনক। তার কারণ, দেশে বৈষম্য ক্রমশ আরও প্রকট হয়ে উঠছে। দেশের জনসংখ্যার নিচের দিকে ১০ শতাংশ মানুষ চরম দারিদ্রে ভুগছে। বিশ্ব ক্ষুধার সূচকে গোটা দুনিয়ার ১১৬ টি রাষ্ট্রের মধ্যে ভারত এখন ১০১ তম স্থানে রয়েছে। বিপুল সংখ্যক শিশু ও মহিলার মধ্যে অপুষ্টির ছাপ স্পষ্ট। এর নিদান চাই। নীতি বদল না করলে তা সম্ভব নয়। তাই রিসেট অপরিহার্য। তিনি আরও বলেন, ৯১ সালের সেই উদারিকরণ নীতি দেশের অর্থনীতিতে নতুন অধ্যায় শুরু করেছিল। তার ফলে দেশ প্রভূত সম্পদ তৈরি করতে পেরেছে, নতুন ব্যবসা শুরু হয়েছে, নতুন উদ্যোগ শুরু হয়েছে, বিপুল সংখ্যক মানুষ নিয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে উঠেছে, লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, রফতানি বেড়েছে। আর তার পরিণামে ১০ বছরের মধ্যে দেশের ২৭ কোটি মানুষকে সেই সময়ে দারিদ্র থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
চিদম্বরমের কথায়, আজ তিরিশ বছর পর ঘরোয়া ও বিশ্বজনীন পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, এবার ফের একটি বড় পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ, বর্তমান সরকার দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ডাহা ফেল করেছে। গত আট বছরে বৃদ্ধির হার ছিল ঐতিহাসিক ভাবে শ্লথ। ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে বৃদ্ধির হার কত পারে তা গত পাঁচ ধরে হিসাব কষতে গিয়ে বার বার কমানো হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির হার সীমাহীন। খুচরো বাজারে মুদ্রাস্ফীতির হার ১৪.৫৫ শতাংশ। খোলা বাজারে তা ৭.৭৯ শতাংশ। সরকারের ভ্রান্ত নীতি তাতে আরও হাওয়া দিচ্ছে। সব থেকে বড় কথা হল, ইউপিএ জমানায় সামাজিক সুরক্ষা খাতে সরকারের মোট খরচের ৯ শতাংশ ব্যয় করা হত। তা কমিয়ে গত আট বছরে মোদী জমানায় করা হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। তাতে দুর্ভোগ বাড়ছে গরীব মানুষের। ফলে গ্রামে চাহিদা বাড়ছে না।