২০১৯-এর ৩১ আগস্টের কথা আজও ভুলতে পারেননি বউবাজারের বাসিন্দা থেকে কলকাতা মেট্রোরেল কর্পোরেশন লিমিটেডের কর্মীরা। ওই দিনই বউবাজারের ভূগর্ভে টানেল বোয়িং মেশিন সুড়ঙ্গ কাটার সময় মাটির ২২ মিটার গভীরে জমে থাকা জলস্তর ভেঙে পড়ে। বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মাটি বসে গিয়ে দুর্গা পিথুরি লেন ও স্যাকরাপাড়া লেনের ৭৪টি বাড়ি হয় ধসে পড়ে অথবা বড় রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আড়াই বছর পর এবার ফের মেট্রোর কাজ চলাকালীন বউবাজার এলাকার একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরেছে। যার ফলে দুর্গা পিতুরির ধস কবলিত তল্লাটজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সোনার গয়নার কারখানা ঘিরে উদ্বেগ, আতঙ্ক জেঁকে বসেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে। কারখানাগুলির সঙ্গে যাঁদের ভবিষ্যৎ আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা, তাঁদের মনেই ঘোর অন্ধকার। এখানকার বাসিন্দাদের তো হোটেলে থাকার জায়গা হল। কিন্তু তাঁদের কী হবে!
বিয়ের মরশুম এখন। সর্বক্ষণই সেখানে চলত ঠোকাঠুকির কাজ। কিন্তু বাড়িতে ফাটল আসতেই সিন্দুক খালি করে সব রত্ন বের করে আনতে হয়েছে। তা রাখবেনই বা কোথায়! উদ্বেগের স্বর কারিগরদের গলায়। বুধবার রাতে তাড়াহুড়োতে কারখানাতেই রয়ে গিয়েছিল হার, বাউটি, বালা, নেকলেস, চূড়, সোনার মুকুটও। বৃহস্পতিবার এখানকার কারিগররা তা বের করে নিয়ে আসেন। কিন্তু তারপর! ভাঙা বাড়ির বাইরে তাই মাথায় হাত দিয়ে বসে অমরনাথ মাইতি, আনন্দ সাহা, গৌতম হাজরারা। তাঁদের কারখানা তখন পুলিশ এবং ব্যারিকেডে ঘেরা। প্রায় শ’দুয়েক লোকের রুটিরুজি আটকা পড়ল সেই ব্যারিকেডে। বিভিন্ন নামকরা স্বর্ণ বিপনীর গয়না তৈরি হয় এখানকারই ছোট ছোট ঘরে। ১৯ নম্বর দুর্গা পিতুরি লেনের তলায় প্রায় ১০টি কারখানা রয়েছে। পাশাপাশি ফাটল ধরা বাড়িগুলোতেও প্রায় সমসংখ্যক সোনার গয়না তৈরির কারখানা। সবমিলিয়ে এদিন তালা ঝুলেছে ৫৫টিতে। তাঁরা কোথায় যাবেন! কোথায় কাজ করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না।